শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » » বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী যেভাবে যৌনব্যবসায়
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী যেভাবে যৌনব্যবসায়
তমা ইসলাম (ছদ্মনাম)। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা এই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের স্নাতকের ছাত্রী। তিনি বর্তমানে যৌন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। নিজের জীবনের নানান ধাপে ধাপে অনেক ধরনের নির্যাতন সয়ে আজ তাকে এ পথে নামতে হয়েছে।
আর বাকি পাঁচজনের মতোই ছিলো তমার জীবন। কিন্তু তার বাবার ব্যবসায়ে ক্ষতি হওয়ার পর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো তমার জীবনে নেমে আসে কালো ছায়া। তমার বাবার রাজধানীর মিরপুরে একটি কাপড়ের দোকান ছিলো। কিন্তু তার বাবার ব্যবসায়ীক পার্টনার তাদের সাথে প্রতারণা করে তমার পরিবারকে নিঃস্ব করে। ওই ব্যক্তি হাতিয়ে নেন তমাদের ২৫ লক্ষ টাকা।
স্নাতকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পরেও ভর্তি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ছিলো না তমার। তার বাবাও তাদের পরিবারের জন্য তেমন কিছু করতে পারছিলেন না। অবস্থা ছিলো অনেকটাই বেগতিক। তমার পরিবারের সদস্যদের দিনের পর দিন আধ পেটা, না খেয়ে পার করতে হতো।
চার ভাই-বোনের মধ্যে তমাই সবার বড়। তিনি তার পরিবারের অবস্থা আর নিজের পড়াশোনার জন্য চাকরির সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকটি চাকরির ওয়েবসাইট ঘুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিভি দেন তমা। কিন্তু দিনের পর দিন পার হলেও তিনি কোথাও ডাক পান না। এ অবস্থায় মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো এই ছাত্রী।
মাসখানেক পর হঠাৎই একটা কল আসে তমার কাছে। একটি প্রতিষ্ঠানে তমাকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। তমা সময় মতো গুলশানের ওই অফিসে হাজির হন। তমাকে তখন সাধারণ কিছু প্রশ্নের পর জানানো হয় এটা একটি বিউটি পার্লারের কাজ। স্পা করাতে হবে নারীদের। তমা দীর্ঘদিন চাকরি খুঁজেও কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে তাদের প্রস্তাবে রাজি হন। ভাবলেন তাও একটা কাজ তো পেয়েছেন। ওইদিনের মতো তমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পরবর্তী তারিখ দিয়ে। জানানো হয় পরবর্তী দিন ওই অফিসের ‘বস’ তমার ইন্টারভিউ নিবেন। তিনি ফাইনাল করলেই তমার চাকরি হবে।
পরবর্তী তারিখে তমা সময় মতো ওই লোকের দেওয়া ঠিকানায় উপস্থিত হন। পরে তাকে ‘হোটেল রেডিশনের’ একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তমা দেখতে পান এক লোক সোফায় বসে আসেন। তমার যেহেতু চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না তাই তিনি তেমন কিছুই আঁচ করতে পারেননি যে, তার সাথে কী ঘটতে যাচ্ছে!
এরপর তমা যেই লোকের সাথে হোটেল পর্যন্ত গেলেন তিনি রুমে থাকা লোকের কাছে তমাকে রেখে ‘কানে কানে’ বলে যান ইনি আমাদের ‘বস’। তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলেই চাকরি কনফার্ম। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করা তমা তখনও কিছু বুঝতে পারেননি। এরপর রুমে ওই লোক জোর জবরদস্তি করে তমাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। শুরু হয় তমার জীবনের নতুন অধ্যায়।
তমা তার জীবনের এই অনাকাঙিক্ষত ঘটনা কাউকে বলতে পারেননি। তার পরিবারের লোকের পাশে তখন তার দাঁড়ানো দরকার ছিলো- এর ওপরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ছোট ছোট তিনটা ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে তমা সেদিন প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু তমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় সেখান থেকেই। তমা সেদিনকার মতো বাড়িতে ফিরে আসেন এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে অন্ধকার জগতের পথ বেছে নেন তমা।
তমা বাড়ি ফেরার দুই-একদিন পর ওই লোকেরা তার সাথে আবার যোগাযোগ করেন। জানান, তমা চাইলে তারা প্রতিমাসে তাকে তিনটা কাজ দিবে। এর জন্য তমাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে। তমাও রাজি হয়ে যান তাদের শর্তে। তমার দাবি, তার সামনে অন্য আর কোনো উপায় ছিলো না!
বি.দ্র: এই লেখাটি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ‘সময়ের অসঙ্গতি’র আলোকে লেখা