চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা
সুশান্ত সাহা-
দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র নিয়ে ফরম পূরণ করলেই ১৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি। রাজধানীতে এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এই চক্রটি যুবক বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরির কথা বলে ফাঁদে ফেলে নানা কৌশলে। এরপর টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। শিক্ষিত বেকাররা নিজ জেলায় ব্যর্থ হয়ে চাকরির সন্ধানে ভিড় জমায় রাজধানীতে। এ সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে। এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। এতে অনেকে চাকরি পাওয়ার আশায় উপরি দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে, দেয়ালে, বাসে লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞপ্তির পোস্টার সেঁটে অথবা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারকচক্র আকৃষ্ট করছে বেকার তরুণ-তরুণীদের। প্রতারকচক্রের প্রধান টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরির কথা বলে তাদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। এরপর নানা কৌশলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা, এমএলএম কোম্পানি, বিপণন কোম্পানি, মার্কেটিং কোম্পানির নামে বেশি প্রতারণা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধান জানা যায়, প্রথমে একটি অফিস ভাড়া নিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে একজন ভূয়া লোক বসানো হয়। এরপর অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেয়। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কথিত জোনাল ম্যানেজার টাকা সংগ্রহ করে। জোনাল ম্যানেজার ওই টাকা এজিএমের মাধ্যমে জিএমের কাছে পৌঁছায়। পরে এজিএম ও জিএমের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়।
এরপর চাকরি প্রত্যাশীকে ডিস্ট্রিবিউটর বা মার্কেটিং অফিসারের অধীনে ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায় প্রতারক চক্র। আর ভূয়া প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশীকে এক মাসের প্রশিক্ষণ দেয়ার নাম করে আটকে রাখা হয়। যখন চাকরি প্রত্যাশী বুঝতে পারে তারা প্রতারিত হয়েছে; তখন প্রতারক চক্রের কাছে দেয়া টাকাগুলো ফেরতের দাবি জানায়। চাকরি প্রত্যাশীর এমন দাবিতে প্রতারক চক্র নানা ধরনের হুমকি দিয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য চাপ দিতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখলে এরই এক পর্যায়ে অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
তাদের খপ্পরে পড়ে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল বেকার যুবকরা হারাচ্ছে অর্থ ও সময়। প্রতারিত হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে বেকারত্বে ধুঁকতে থাকা মানুষগুলো। সবচেয়ে বেশি প্রতারণা করা হচ্ছে সিকিউরিটি গার্ড ও গার্মেন্টে চাকরি দেয়ার নামে।
গত ৬ মাসে এ ধরনের অর্ধশত প্রতারককে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো প্রতারণায় নেমে পড়ে।
সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া কিছু প্রতারকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়েছে প্রতারণার নানা কৌশলের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,পত্রিকা ও লিফলেটের মাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ২ জুলাই রাজধানীর দনিয়া এলাকা থেকে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। ২২ জুন রাজধানীর মহাখালীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ২০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া গত ২২ জানুয়ারি প্রতারক চক্রের ৩০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব।
ডিএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) (মিডিয়া) মফিজুর রহমান পলাশ বলেন, একটু সচেতন থাকলে এসব প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব প্রতিরোধে সব সময়ই তৎপর। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি কেউ এরকম প্রতারকের সন্ধান পেলে তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।