বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » তথ্য-প্রযুক্তি » ‘নারীর যৌনতা’ স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে তিনিই প্রথম গবষণা করেন
‘নারীর যৌনতা’ স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে তিনিই প্রথম গবষণা করেন
সমাজের এক ধরনের ট্যাবু নারীর যৌনতার বিষয়টি। বিংশ শতাব্দীতে এসেও এই বিষয় নিয়ে কানাকানি, হাসাহাসি রয়েছেই। তবে জানেন কি? ১৯ শতকে এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন এক রাজকুমারী। তার নাম মেরি বোনাপার্ট। অনেকের কাছেই তিনি নারীর যৌনতা বিষয়ে গবেষণাযর পথিকৃৎ। আবার অনেকের কাছে তিনি শুধুই ধনী ও প্রভাবশালী মহলের ঘনিষ্ঠ এক নারী।
তবে মেরি বোনাপার্টের আসল পরিচয়- তিনি ফ্রান্সের রাজা প্রথম নেপোলিয়ানের বংশধর এবং ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অন এডিনবারা-প্রিন্স ফিলিপের চাচী। মেরি বোনাপার্টের ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন রাজকুমারী বা প্রিন্সেস। প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার পর থেকেই মেরির আগ্রহ জন্মায় নারীর যৌনতার বিষয়ে গবেষণা করার। ফলে এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি শিক্ষার্থী হয়েছিলেন এবং এক সময়ে তিনি মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষক সিগমান্ড ফ্রয়েডের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
মেরি
সবকিছুর ওপরে মেরি বোনাপার্ট ছিলেন একজন মুক্তমনা নারী। তিনি তার জীবনীতে লিখেছেন, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ নারী, বৈজ্ঞানিকদের বলয়ে যেমন, তেমনই বিশ্বের রাজন্য মহলে তার ছিল সমান দক্ষতায় পদচারণ। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল নারীর যৌনতা নিয়ে গবেষণায় তার উৎসুক্য।
যে কারণে তার এই বিষয়ে আগ্রহ জন্মায়-
মেরি বোনাপার্ট জন্মেছিলেন প্যারিসে এক অভিজাত ধনী রাজপরিবারে। ফ্রান্সের রাজকুমার রোলান্ড নেপোলিয়ান বোনাপার্ত ও মারি ফেলিক্সের কন্যা ছিলেন তিনি। তার মাতামহ ছিলেন মন্টি কার্লো ক্যাসিনোর প্রতিষ্ঠাতা ও বিশাল ধনকুবের ব্যবসায়ী। তার জীবন শুরু হয়েছিল দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মধ্যে দিয়ে। জন্মের সময় তিনি প্রায় মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলেন। আর তার জন্মের এক মাসের মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন তার মা। শৈশব তার সুখের ছিল না। তিনি ছিলেন খুব একা।
মেরি ও তার স্বামী
বাড়িতে আর কোনো শিশু না থাকায় তার কোনো খেলার সঙ্গী ছিল না। তিনি ছিলেন বাবার ভক্ত। তারবাবা ছিলেন নৃতত্ত্ববিদ এবং ভূগোল বিশারদ। আর পিতামহ ছিলেন রাশভারী তাকে বাঘের মত ভয় করতেন মারি। ছোটবেলা থেকেই তার গভীর আগ্রহ ছিল বিজ্ঞান, সাহিত্য, আর লেখায় আর সেইসঙ্গে শরীর সম্পর্কে ছিল তার দারুণ কৌতূহল।
তার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক আয়া একদিন দেখেন মেরি হস্তমৈথুন করছেন। ‘এটা পাপ কাজ, এটা অন্যায়। তুমি মরে যাবে এ কাজ করলে।’ এভাবেই সেদিন ওই আয়া মেরিকে ভয় দেখায় ও এই কাজ করতে নিষেধ করেন। মেরি ১৯০২ সালে তার ডায়েরিতে বিষয়টি লিখেছিলেন। তখন তার বয়স আট কি নয়। মৃত্যুভয়ে ঠিকই মেরি এ কাজ আর করেননি। তবে ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে একটা বিদ্রোহী মনোভাব ছিল। মেয়ে বলে মাথা নিচু করে থাকতে হবে, সবকিছু মেনে নিতে হবে- এই ধারণা তিনি মেনে নেননি কখনো।
বিয়ের সময় মেরি
কিশোর বয়সে তিনি ইংরেজি ও জার্মান ভাষা শিখতে শুরু করেন। পড়ালেখায় তিনি খুবই ভালো করছেলেন তবে বাবা ও দাদীর নির্দেশে তার স্কুলে যাওয়া পরীক্ষা বন্ধ করা হয়। তিনি রাজকুমারী হলেও নারীর যৌনতা নিয়ে পড়াশোনা তিনি চালিয়ে গেছেন। মেরি তার ডায়েরিতে লিখেছেন, আমার নাম, আমার বংশপরিচয়, আমার ভাগ্যকে ধিক্কার জানাচ্ছি- বিশেষ করে আমি যে মেয়ে সেটাকে। কারণ আমি ছেলে হলে ওরা আমাকে আটকাতো না।মেরির বয়স যখন ২০ বছর, তখন মেরি তার বাবার এক সহকারীর প্রেমে পড়েন। তিনি ছিলেন বিবাহিত। সেই প্রেম নিয়ে কেলেংকারি শেষ পর্যন্ত গড়ায় ব্ল্যাকমেইলের ঘটনায় এবং মেরির জন্য তা বয়ে আনে পারিবারিক কলঙ্ক। তার বাবা মেরির থেকে ১৩ বছরের বড় গ্রিস ও ডেনমার্কের রাজপুত্র প্রিন্স জর্জের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। এথেন্সে ১৯০৭ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান হয়- এক ছেলে, এক মেয়ে। তবে তাদের বিয়ে ৫০ বছর স্থায়ী হলেও সেই বিয়ে সুখের হয়নি। অল্পদিনের মধ্যেই মেরি বুঝতে পেরেছিলেন তার স্বামী আসলে একজন সমকামি। নিজ চাচাতো ভাই প্রিন্স ভল্ডেমারের সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক রয়েছে।
দুই সন্তানের মা মেরি
এসব জানার পর মেরি সব কিছু ভুলতে পড়াশোনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দেন। এবার তিনি নারীর কামনা ও যৌনতা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি ১৯২৪ সালে একটি প্রবন্ধ লেখেন এ.ই. নারজানি এই ছদ্মনামে। যার বিষয় ছিল যৌনমিলনের সময় নারী কেন কঠিন ও অসাড় থাকে। কেন আনন্দ পায় না? দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি নারীর যৌনতা বিষয়ক বিভিন্ন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ১৯৬২ সালে ৮০ বছর বয়সে মেরি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।