লঞ্চডুবিতে শিশুসন্তানকে আঁচলে বাঁধলেন মা
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি-
মায়ের চেয়ে আপন কেউ নয়। সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় ঠিকানা মায়ের আঁচল। এই আঁচলে আছে মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসা। এজন্যই সন্তান মায়ের আঁচলে মুখ লুকায়। মায়ের আঁচলে চোখের পানি মোছেনি এমন সন্তান নেই। বিপদ কিংবা কারও হাত থেকে বাঁচতে দৌড়ে এসে মায়ের আঁচলে লুকায় সন্তান। পরম মমতায় সন্তানকে আগলে রাখেন মাও।
এতটা আস্থা আর ভরসা থেকেই মায়ের আঁচলে আশ্রয় নিয়েছিল আট বছরের সিফাত। সন্তানকে বাঁচাতে আঁচল পেতে দিয়েছেন মা। আদরের সন্তানকে আঁচলে পেঁচিয়ে বুড়িগঙ্গায় ডুবে যান মা। হয়তো আশা ছিল, নিজে মারা গেলেও সন্তান বেঁচে যাবে। কিন্তু বিধিবাম। একসঙ্গে মা-সন্তান দুজনই নদীতে ডুবে মারা গেলেন।
বলছিলাম সোমবার (২৯ জুন) রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনার কথা। এ পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মায়ের আঁচলে পেঁচানো এক সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই সন্তানের নাম সিফাত (৮)। তার মায়ের নাম হাসিনা বেগম (৩৫)। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের আইনজীবী আব্দুর রহমানের (৪৮) স্ত্রী হাসিনা বেগম। লঞ্চডুবির ঘটনায় একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। হাসিনা বেগম ও ছেলে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও আব্দুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়নি।
আব্দুর রহমান ঢাকার জজ কোর্টে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করলেও করোনায় লকডাউনের কারণে কোর্টের কাজকর্ম বন্ধ থাকায় কয়েক মাস ধরে গ্রামের বাড়ি টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামে ছিলেন।
রোববার (২৯ জুন) সকালে মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম থেকে মর্নিং বার্ড লঞ্চযোগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন আব্দুর রহমান। রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। সোমবার দুপুরে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্দুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যখন হাসিনা বেগমের মরদেহ নদী থেকে উঠানো হয় তখন শাড়ির আঁচলে পেঁচানো ছিল শিশুপুত্র সিফাতের মরদেহ। বিষয়টি দেখে বিস্মিত হন সবাই।
হাসিনা বেগমের ভাই রবিন বলেন, আপার শাড়ির আঁচলে পেটের সঙ্গে বাঁধা ছিল ভাগনে সিফাত। হয়তো আপা বিপদ বুঝে ভাগনেকে আঁচলে বেঁধেছেন আগেই। কিন্তু মা-ছেলে কেউ বাঁচল না। দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুলাভাইয়ের মরদেহ পাওয়া যায়নি এখনও।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নয়ন বলেন, আবদুল্লাহপুর গ্রামের ওই তিনজন ছাড়াও লঞ্চডুবির ঘটনায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন হালিম মুন্সির ছেলে মনিরুজ্জামান (৪২) এবং ফজল ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (৩২)। মনিরুজ্জামানের মরদেহ পাওয়া গেলেও সুমন ব্যাপারীর মরদেহ পাওয়া যায়নি।
এদিকে একই লঞ্চডুবিতে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বায়হাল গ্রামের চারজন, কামাড়খাড়া গ্রামের দুজন এবং হাটকান গ্রামের দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিনা আক্তার বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃতদের কোনো তথ্য নেই।