কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায়?
অনলাইন ডেস্ক-
জীবনের সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক বিষয় হচ্ছে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য। তাই প্রিয় বা সবচেয়ে কাছের মানুষটির সঙ্গে মিষ্টি মধুর সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখাও কিন্তু কঠিন কাজ। কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় ভালোবাসার সম্পর্ক তা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
ঝগড়া-বিবাদকে ভয় নয়
একসঙ্গে থাকতে গেলে দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি বা মান অভিমান হবেই। ঝগড়াহীন নিটোল সম্পর্ক সাধারণত হয় না। আর এটা সম্ভবও নয়। তাই ধরে নিন, আপনাদের মধ্যে যে কোনও সময় ঝগড়া হবে। তাছাড়া নিজের স্বাতন্ত্র্যকে প্রকাশ করতে গেলে কিছু মতপার্থক্য তো হতেই পারে। সম্পর্কের মধ্যে এরকম সংঘাত যে খুব খারাপ জিনিস তা সবসময় ঠিক নয়। অনেকে বলেন, দুজনের মধ্যেকার মান অভিমান যুগল জীবনকে আরো মধুর করে।
তবে ঝগড়া হলে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টাও কিন্তু করতে হবে। এ অবস্থায় সারাক্ষণ অন্যজন কি ভুল করছে সেটা চিন্তা করলে চলবে না। বরং নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি ভুল করেছেন এবং আমি কিভাবে ভুলগুলো শুধরে নেয়া যায়।
দু’জনে মিলে আনন্দ করুন
সম্পর্ক মানে কিন্তু একসাথে বাজারে যাওয়া আর ঘরবাড়ির আবর্জনা পরিষ্কার করা কিংবা রান্নাবান্না নয়। নিজেরা আনন্দ পাওয়ার জন্য আলাদা কিছু করুন। দুজনে মিলে ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন, কিংবা সিনেমা দেখতে গেলেন। আর সবসময় যে বেড়াতেই যেত হবে এমন কোনও কথা নেই, বাড়িতে থেকেও কিন্তু আনন্দ করা যায়। মোট কথা একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করতে হবে। সেটা একসাথে খেতে যাওয়াই হোক, কোথাও বেড়াতে যাওয়াই হোক বা বিছানায় একটা অলস সকাল কাটানোই হোক
মনের কথা স্পষ্ট করে বলুন
ঝগড়া বিবাদের একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, সব কথা মনে মনে রাখা। বিশেষ করে মেয়েরা এই কাজটা বেশি করেন। কোনও কথা বা প্রশ্ন মনের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে সঙ্গীর কাছে সরাসরি প্রকাশ করুন। এতে অহেতুক ঝামেলা বা ভুল বোঝাবুঝি কমে যাবে। এমনকি আপনি নিজে যদি কোনও অন্যায় বা ভুল করে থাকেন সেটাও স্বীকার করুন। প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন।
আর সরাসরি বলতে না চাইলে, একটা এসএমএস বা ইমেইল তো পাঠাতে পারেন। অথবা ছোট্ট একটা চিরকুট। প্রিয়জনকে সরি বলার ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না।
সুন্দর মুহূর্তগুলো উদযাপন করুন
হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার সমাহার জীবন। কখন আবার সুযোগ আসে কে জানে! তাই যখনই আনন্দ করার সুযোগ আসে, চুটিয়ে তা এনজয় করুন। কে জানে হয়তো আগামী দিনে এমন আনন্দের মুহূর্ত নাই আসতে পারে দুজনের জীবনে।
আপনার কিংবা সঙ্গীর পদোন্নতি, তার জন্মদিন, ম্যারিজ ডে যাই হউক না কেন, মন খুলে সেই দিনটি উপভোগ করুন। চাইলে দুজন মিলে কিংবা দল বেঁধে বেরিয়ে আসুন আশপাশের কোথাও থেকে। এতে মন যেমন ভালো হবে, সম্পর্ক হবে আরও মজবুত। এসব আনন্দের দিনগুলো আপনাদের যুগল জীবনে টনিকের কাজ করবে। খারাপ সময়গুলো পার করতে সাহায্য করবে এসব আনন্দঘন মুহূর্তগুলো।
নিজেকে মেলে ধরুন
আড়ষ্ঠতা কোনও সম্পর্কেই আগে বাড়তে দেয় না। তাই যাকে ভালোবাসেন এবং যে মানুষটির ওপর নির্ভর করছেন, তার কাছে নিজেকে মেলে ধরুন। আপনার দুর্বলতা, ভয়, দুশ্চিন্তাগুলো তাকে জানতে দিন এবং তার সহায়তা চান। দেখবেন আপনার সঙ্গীও তাই করবে। অযথা নিজেকে আড়াল করে সেম্পর্কের মাঝে দেয়াল তৈরি করবেন না। তাই করবে।
একজন গবেষক বলেছেন, ‘হাজার হাজার লোকের সাক্ষাতকার নিয়ে আমি এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি যে - পরস্পরের দুর্বলতাগুলো বিনিময় না করলে কখনো শারীরিক-মানসিক-আত্মিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় না।’
অন্যের প্রতি দয়া, সহমর্মিতা দেখান
আমরা অনেক সময়ই নিজের প্রিয়জনকে এমনভাবে নিই যেন ‘ও তো আছেই’ । তা না করে একে স্বীকৃতি দিন, তার প্রতি সদয় হোন। প্রয়োজনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে দ্বিধা করবেন না। সে অসুস্থ হলে তার সেবা করুন, চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এসময় সে কিছুটা বিরক্ত দেখালেও গায়ে মাখবেন না। তার বিশেষ দিনগুলোর দিকেও খেয়াল রাখুন। তার জন্মদিনে স্পেশাল বা তার পছন্দের কিছু পদ রান্না করে তাকে চমকে দিতে পারেন। এরকম ছোট ছোট বিষয় যুগল জীবনকে সুন্দর করে এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করে।
‘স্বপ্নের মানুষ’ নেই
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই একজন‘স্বপ্নের মানুষ’খোঁজেন। এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে অনেকে নিজের দাম্পত্য জীবনকে চরম অশান্তিতে ভরে তোলে। সত্যি কথা বলতে কি এরকম স্বপ্নের মানুষ বলতে কিছু নেই। যে আপনার পাশে আছে, বিপদ আপদে আগলে রেখেছে, যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে আপনার যুগল জীবন, সেই তো আপনার স্বপ্নের মানুষ। তাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসুন, তাকেই গড়ে আপনার স্বপ্নসঙ্গী হিসাবে। আপনি বিয়ের আগে কি ভাবতেন সেইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
জীবনটা তো সিনেমা নয় রে ভাই। তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হন এবং সুখে থাকুন।