পুরনো প্রেমিক ব্ল্যাকমেইল করলে কী করবেন…
অনলাইন ডেস্ক-
আমাদের সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে ঘুরে বেড়ায় অনেক মানুষ। কারো দুর্বলতা জানতে পারলে তাদের আসল চেহারাটা বেরিয়ে আসে। শুরু করে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল। আমাদের সমাজের নারীরাই সাধারণত এসব ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে থাকেন। তবে পুরুষরাও যে হন না, তা বলছি না। আমি এখানে একজন বিবাহিত নারী ঘটনা তুলে ধরবো।
ধরে নেই তার নাম শাহানা সেলিম, থাকেন রাজধানীতেই। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার। একদিন হঠাৎ করে একটা ফোন আসে। আবেগে আপ্লুত হয়ে যান শাহানা। কেননা ফোনটা করেছে তার সাবেক প্রেমিক সোহেল, যার জন্য একদিন নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারতেন এই গৃহবধূ। যদিও নানা কারণে তাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ের পর সোহেলকে ভুলতে তার কষ্ট হয়েছে। সময় লেগেছে নতুন জীবনে এডজাস্ট করতেও। এতদিন পর পুরনো প্রেমিকের ফোন পেয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েন শাহানা। কিন্তু এই আবেগ কাটতে খুব বেশি সময় লাগে না। এ কথা সে কথার পর আসল কথায় আসেন সোহেল। তার টাকা চাই, না পেলে তছনছ করে দেবে শাহানার সুখের সংসার। তার কাছে থাকা নানা ডকুমেন্ট (ছবি, ভিডিও, ম্যাসেজ) তার স্বামীকে জানিয়ে দিবে। এরপর একটা ফাঁদের মধ্যে পড়ে যায় শাহানা।
সে নিয়মিত সোহেলের চাহিদা মতো টাকা দিতে থাকে। কখনও মা-বাবার কাছ থেকে, কখনও বা স্বামীর কাছ থেকে এনে। এজন্য তাকে অনেক মিথ্যা কথাও বলতে হয়। এমনকি সোহেলের চাহিদা মেটাতে গোপনে নিজের কিছু গয়নাও বিক্রি করে দেয় সে। এ অবস্থায় অসহ্য হয়ে ওঠে শাহানার জীবন। সে কী করবে ভেবে পায় না! সে চরম মানসিক অশান্তিতে ভুগতে থাকে। এ অবস্থায় এক লাখ টাকা দাবি করে বসে সোহেল। কিন্তু এত টাকা কীভাবে জোগাড় করবে শাহানা? তাই স্বামীকে সে সব খুলে বলার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বামী যদি তাকে ভুল বোঝে তাহলে আত্মহত্যা করবে বলেও ভেবে নেয় সে।
এই পরিকল্পনা করেই একদিন সোহেলকে সে টাকা দেয়ার নাম করে বাসায় ডেকে আনে। পুরনো প্রেমিককে ড্রয়ংরুমে বসিয়ে সে বেডরুমে যায়। এরপর তার স্বামী আরমানকে সব খুলে বলে। সব শোনার পর আরমান বলে, ‘তুমি এতদিন আমাকে বল নাই কেন?’
তখন আরমান নিজের কলেজ জীবনের বন্ধু যিনি এখন পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন, তাকে ফোন করেন। সব শোনার পর তার বন্ধু পুলিশ পাঠায় এবং তারা এসে সোহেলকে ধরে নিয়ে যায়।
এটি গল্পের মতো শোনালেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। আর এ ধরনের ঘটনা আমাদের অনেকের জীবনেই ঘটতে পারে। আর এখানে শাহানার স্বামী ভালো বলে শাহানা বেঁচে গেছেন। কিন্তু অনেক সময় অনেকের জীবনে এ থেকে নানা অঘটন হতে পারে। তাই এসব ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পা দেবেন না। নিজের এরকম ঘটনা ঘটার আগেই জেনে নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা।
প্রথম কথা হচ্ছে- আপনি অপরাধী নন, ভিকটিম। আর এতে আপনার কোনও দোষ নেই। আপনার অতীতকে আপনি পেছনে ফেলে এসেছেন, সেটাকে খুঁচিয়ে বের করে কোনও কাপুরুষ যদি ফায়দা লুটতে চায় সেটা তো আপনার অপরাধ না। তাই তাকে সোজাসুজি বলে দিন, ‘তুমি যা করার কর, আমি তোমাকে ভয় পাই না’। আপনি যদি নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখেন তাহলে সে কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। উল্টো ভয় পেয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত- দেশের প্রচলিত আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী সাদা বাংলায় বললে, যে কোন ধরণের ব্ল্যাকমেইল-কে এক্সটরশন বা চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে, ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড, সেটি জরিমানাসহ বা ব্যতীরেকে।
ইন্টারনেট/ফেসবুক-এর মাধ্যমে কেউ যদি আপনার ক্ষতি করতে চায় সেক্ষেত্রে আইনটি দেখুন – ICT (Amendment) Act-2013 দেখুন।
এই অধ্যাদেশের ৫৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বৈদ্যুতিক মাধ্যমে প্রকাশিত এমন কোনও উপাদান প্রকাশ করে, যা রাষ্ট্র বা কোনও ব্যক্তির ভাবমূর্তি বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত দেয়; তাহলে অপরাধীকে সর্বাধিক ১৪ বছরের এবং সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ বলেও বিবেচিত।
জ্বি, ঠিক দেখেছেন। ফেসবুকে কেউ আপনার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করলে সাহস করে মামলা করে দিন, প্রমাণ হলে অপরাধী কমপক্ষে ৭ বছর জেল খাটবে। এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ। এছাড়া চাঁদাবাজির জন্য তো আলাদা আইন আছেই।
তৃতীয়ত- ব্ল্যাকমেইল-এর শিকার হলেই ভয় না পেয়ে আপনজনদের সহায়তা নিন। মনে রাখবেন সবার আগে পরিবার। তাদেরকে সব জানিয়ে দিন, কিছুই লুকানোর দরকার নেই। অধিকাংশ ক্ষেই দেখা যায়, ভুক্তভুগী এসব ঘটনা পরিবারকে জানাতে দ্বিধা করে। জেনে রাখুন, আপনার চরম দুঃসময়ে আপনার পরিবারই আপনার সবচাইতে বড় ভরসা। তারা হয়তো আপনার অতীতের ভুলের কারণে কষ্ট পাবেন, কিন্তু প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে গেলে আপনার সাহায্যে তারা এগিয়ে আসবেন এটা মোটামুটি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।
চতুর্থত- মনের জোর হারাবেন না এবং কখনই নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। ব্ল্যাকমেইলিং একটি জঘন্য অপরাধ। আর দেশের আইন আপনার পাশে আছে। ঠুনকো সামাজিক সম্মানের ভয়ে নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবেন না। তাই সাহস করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন এবং আইনের সহায়তা নিন।
এমএ/