নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের কারিগর
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি-
নারায়ণগঞ্জেরে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের গ্রাম পিরুলিয়া ও নয়ামাটি। ডুবন্ত বা ভাসমান দুটিই বলা যায় এই গ্রামকে।আসলে গ্রাম ঠিক নয়, ছোট্ট একটি দ্বীপ। চারিদিকে পানি। ছোট্টবেলা থেকেই পানির সাথে মিতালী এলাকাবাসীর। সবাই নৌকাই যাতায়াত করেন। ছোট ছোট ছেলেদেরকেও নৌকা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এসব গ্রামে।
যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই বিদ্যুৎ। নেই কোনো উন্নয়নের ছিটেফোটা। পিরুলিয়া নামক এ গ্রামে তৈরি হচ্ছে বর্ষায় জন্য নৌকা। পাশেই আরেকটি গ্রাম নয়ামাটি। নৌকা তৈরির এ গ্রাম দু’টির অদূরেই বালু নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট।
শীতলক্ষ্যা আর বালু নদী বিধৌত রূপগঞ্জ উপজেলা। বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী নীচু এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষার প্রথম থেকেই নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
রূপগঞ্জের অজোপাড়াগায়ের পল্লীতে গড়ে উঠেছে নৌকার গ্রাম। কাঠের খুটখাট আর নদীর পানির ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ যে-কারো মনকে আবেগে ভরিয়ে দেবে। হয়তো কিছু সময়ের জন্য জন্য কেউ কবি বনে যেতে পারে।
একদিকে নদী, আর তিন দিকে বর্ষার পানি এলাকা দু’টিকে বিস্তীর্ন ব-দ্বীপে পরিনত করেছে। বর্ষা আসলেই রূপগঞ্জের নয়ামাটি ও পিরুলিয়া এলাকায় নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কারিগরেরা হয়ে পড়ে মহাব্যস্ত। কায়েতপাড়া নৌকার হাটটিতে তখন চলে নৌকা বেচাকেনার রমরমা ব্যবসা।
এছাড়া গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকন্দাইল বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার বসে নৌকার হাট। ইছাখালী-নগরপাড়া সড়কের অদূরেই নৌকার গ্রাম। এলাকা দুটি পানিতে ডুবে আছে। গ্রামগুলো পানির উপরে মাথাতুলে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপের মতো। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাত্র তিন মাসের মৌসুমি ব্যবসা। চাহিদা যথেষ্ট, তাই কারিগরদের ব্যবস্থাও বেশি।
নৌকা তৈরির কারিগর হক সাহেব বলেন, এবার লকডাউনের কারণে মালামাল আনতে পারিনি। তাই নৌকা তৈরিতে দেরি হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করছি মানুষের কাছে দ্রুত নৌকা তৈরি করে পৌঁছে দেয়ার।
তিনি বলেন, বাড়িতেও কাস্টমাররা আসছে। মালের দাম একটু বেশি। কারিগরও তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। এবার নৌকার দামও একটু বেশি পড়ছে। প্রতি বৃহস্পতিবার হাটে নৌকা তুলে দিচ্ছি। ক্রেতারাও কিনে নিচ্ছেন।
পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এলাকার নৌকা তৈরির কারিগরেরা এখন ভালই আছেন। নৌকা বিক্রি করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। বছর শেষে মোটামুটি লাভের মুখ ও দেখছেন। কথাগুলো একবাক্যে বললেন পিরুলিয়া এলাকার নারায়ন সরকার। তার ছেলে লেখাপড়া করছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
নয়ামাটি এলাকার ইয়াসিন বলেন, ‘কই খারাপতো নাইগো ভাই। মোডা ভাত আর মোডা কাপড় পরবার পারি। এইডাই সুখ। বর্ষাকাল আইলে আমাদের বেচাকিনি ভাইল হয়। কেউ বানানো নৌকা হাট থেকে কিনে নেন। আবার অনেকে আমাদের গ্রামে এসে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেন।’
ইছাখালী এলাকার ছাইদুল মিয়া এসেছেন ওর্ডার দিয়ে নৌকা বানাতে। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, অর্ডার দেয়া নৌকা ইচ্ছামতো বানানো যায়। মানেও কিছুটা ভাল হয়। দামও একটু বেশি পড়ে।
নৌকার কারিগর নিপেন সরকার বলেন, এক-একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে ৯/১০ হাজার টাকা। আর মোটামুটি কাঠের নৌকা তৈরিতে খরচ পড়ে ৬/৭ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক স্বর্নপদকপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এড. গোলজার হোসেন বলেন, বর্ষা এলে এখানকার কারিগরদের দম ফালানোর ফুসরত নেই। এ এলাকার নৌকাগুলোও ভাল মানের হয়। ঢাকা শহরের আশেপাশের অনেক নিচু এলাকা থেকেও ক্রেতারা নৌকা বানাতে ও কিনতে এখানে আসেন।