শুধু মাস্ক ব্যবহার করলেই হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
রোগ প্রতিরোধের জন্য মাস্ক কোনো একক পদ্ধতি না। মাস্ক পরিধানের সাথে সাথে বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তাছাড়া কমপক্ষে তিন ফিট সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্য পরামর্শ যথাযথ মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি যারা করোনার এই মহামারিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের ধন্যবাদ দেন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককেই মাস্ক পরতে হবে। বাসায় তৈরি তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। এই মাস্ক একবার ব্যবহার করার পরে সাবান দিয়ে ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করবেন। যাদের বয়স ৬০ বছরের উপরে, তাদেরকেও মেডিকেল মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’
নাসিমা সুলতানা আরো বলেন, ‘তবে করোনা প্রতিরোধে মাস্ক একক কোনো পদ্ধতি না। পাশাপাশি বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক, সাবান, তিন ফুট দূরত্ব– এই তিনটি বিষয় মিলেই করোনা প্রতিরোধ করা যাবে। সেজন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা যেন এই স্বাস্থ্য নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন করি ও মেনে চলি। নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখি, পরিবারের সকল সদস্যকে সুরক্ষিত রাখি।’
বুলেটিনে ৫০টি ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১২হাজার ৯০৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৪৮৬টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৮৪ হাজার ৮৫১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৬৩৫ জনের দেহে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৩ হাজার ২৬ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৮৪৬ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫২১ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১২ হাজার ৮০৪ জন।
নাসিমা সুলতানা বলেন, মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১-৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১-৮০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ২১-৩০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ১১-২০ বছরের ২ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ২৫ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ৯ জন। আর মৃত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন একজন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৭.০৬ শতাংশ এবং নারী ২২.৯ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩১৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭ হাজার ১৬২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯৮ জন।, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৯ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯৯ হাজার ২২২ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৮১১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৯২৫ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ২৯৭ জন।
প্রসঙ্গত, চীনের উহান থেকে বিস্তার শুরু করে গত চার মাসে বিশ্বের ২১২টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনে করোনার প্রভাব কমলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে মহামারি রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৯ লাখ ছুঁই ছুঁই। মারা গেছেন তিন লাখ ৯৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে ৩৩ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।