ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত যৌনকর্মীরা
করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যৌন ব্যবসা সম্ভব না। আর তাই ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে অনেক যৌনকর্মী। অনেকে ভিন্ন উপায় হিসেবে অনলাইনে সেবা দিচ্ছেন। বাকিরা আর্থিক সহায়তা পেতে ছুটছেন দাতব্য সংস্থাগুলোর কাছে।
বিভিন্ন দেশের যৌনকর্মীদের দুর্ভোগ তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেলবোর্নে গত ১০ বছর ধরে এসকর্টের কাজ করে খদ্দেরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এস্টেল লুকাস। কোভিড-১৯ মহামারী আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মে তার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। খদ্দেরদের কাছে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলার এত দিনের চেষ্টা বিফলে যাবে বলে মনে হচ্ছে তার।
তিনি বলেন, এটা বলাই যায় যে আমি আগামী ছয় মাস কোনো কাজ করতে না পারলে খদ্দেরদের অনেকেই আমাকে ভুলে যাবে। খদ্দেরের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ হতে হয়, যা এই পরিস্থিতিতে সম্ভব হচ্ছে না।
কোভিড-১৯ মহামারীর আগে গড়পড়তার চেয়ে বেশি আয় করতেন লুকাস। ভেবেছিলেন তাতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের শহরতলিতে তার বাড়ির ঋণ শিগগিরই শোধ করতে পারবেন। এখন বলতে গেলে তার আয় নেই। অনলাইনে এই ব্যবসা চালানোর চেষ্টা করছেন। তবে কিন্তু এটা শারীরিক সম্পর্কের বিকল্প হতে পারবে না বলেও বুঝে গেছেন।
লুকাস বলেন, আমি অনলাইনে ব্যবসাটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু সবাই তো প্রযুক্তিতে পারদর্শী নয়। আমার অনেক খদ্দের তো স্মার্টফোনই ব্যবহার করতে জানেন না।
অস্ট্রেলিয়ার অনেক জায়গায় রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খোলা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হলেও যৌনপল্লী খোলার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা নেই। এই অনিশ্চয়তা, আর খোদ করোনাভাইরাসের অনেক অজানা বিষয় নিয়ে অনেক যৌনকর্মী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারীতে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাবেন। তবে এজন্য তাদের দেখাতে হবে যে তারা আয়কর দেন। কিন্তু নিবন্ধনহীন যৌনকর্মীদের পক্ষে তা দেখানো সম্ভব হবে না।
এদিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে টিনের চালার ঘর আর সরু গলির এই পল্লীতে ১ হাজার ৩০০ নারীর ও তাদের ৪০০ শিশুর বাস। গত মার্চ থেকেই এই যৌনপল্লী বন্ধ রাখায় জরুরি পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন যৌনকর্মীরা। নির্ভর করছেন দাতব্য সংস্থাগুরোর দানের ওপর।
এই যৌনপল্লীর একজন নাজমা (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা এখন কাজ করতে পারছি না। আমাদের কোনো রোজগার নেই, এটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার।
নিজের গ্রামে বোনের কাছে থাকা তিন সন্তানের খরচ দিতে হয় নাজমার। ৩০ বছর আগে মাত্র সাত বছর বয়সে এই যৌনপল্লীতে আসেন তিনি। অর্থের প্রয়োজন থাকলেও এই মহামারীতে কাজ করার বিপদ নিয়েও শঙ্কিত নাজমা।
নাজমা বলেন, যদি আমরা এ সময় কাজ করতে পারতামও, মানুষের জীবন তো ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিতে থাকতো। আমরা খদ্দেরের সঙ্গে বিছানায় যেতে ভয় পেতাম। আমরা তো জানি না কে আক্রান্ত হতে পারে।
ঢাকার একজন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী শ্রাবন্তী হুদা জানান, বাংলাদেশের সরকার ও স্থানীয় সংস্থাগুলো কিছু জরুরি সহায়তা দিলেও তা সবার জন্য পর্যাপ্ত নয়। অনেক নারী কোনো কিছুই পায়নি।
তিনি বলেন, যে অনুদান দেয়া হয়েছে সরকার থেকে তা দিয়ে সন্তানের জন্য এক প্যাকেট গুঁড়োদুধও কেনা যায় না।