২০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে ‘আম্ফান’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে। থাইল্যান্ড ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘আম্ফান’।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রথমে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ উত্তরমুখী হলেও পরে বাঁক নিয়ে তা উত্তর-পূর্ব দিকে ধীরে ধীরে এগোবে। এখনো পর্যন্ত যা গতিপ্রকৃতি, তাতে মঙ্গল-বুধবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ‘আম্ফান’ আছড়ে পড়তে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। রোববার (১৭ মে) সকালে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান দ্রুতই শক্তি বৃদ্ধি করছে। ফলে এটি বিপদও বাড়াচ্ছে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ’আম্ফান’ সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় (১৭ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৮০ শতাংশ। বর্তমানে নিম্নচাপটির যে গতিমুখ রয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পথ নির্দেশ করছে। তবে গতিপথ যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে। আর যে গতিতে এগোচ্ছে সেই গতি ধরে রাখলে ১৯ কিংবা ২০ মের দিকে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পরে তা আরও শক্তি বাড়িয়ে অতি ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড়ের গতি পৌঁছে যেতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ১৭০-২০০ কিলোমিটার। স্থলভাগের দিকে যত এগোবে, তার গতি কিছুটা কমবে। তবে আছড়ে পড়ার সময় আম্ফান কতটা শক্তি বাড়াবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের উপরে গভীর নিম্নচাপটি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এক হাজার ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। দিঘা থেকে এক হাজার ২২০ কিলোমিটার, বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে এক হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ‘আম্ফান’ উপকূলে আছড়ে পড়ে, তা হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। ক্ষতি হতে পারে চাষের। একে করোনার জেরে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তার উপরে ‘আম্ফান’ যদি সরাসরি ছোবল মারে উপকূল এলাকায়, তা হলে সংকট আরও বাড়বে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর গতিপ্রকৃতিও ঠিক একই রকম ছিল। ওড়িশার পারাদ্বীপের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে এ রাজ্যের কান ঘেঁষে সুন্দরবনের উপর দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। ‘আম্ফান’ পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়বে, নাকি বুলবুলের পথেই সে যাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।