মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় » ৫ বছরে প্রাণ গেল দেড় হাজার পোশাক কারখানার, বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ
৫ বছরে প্রাণ গেল দেড় হাজার পোশাক কারখানার, বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ
নিজস্ব সংবাদদাতা :
কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত। গত সাত মাসে ২৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। আরগেল ৪ মাসে ৪৬টি আর ৫ বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পোশাক কারখানা।
বন্ধ এসব কারখানার শ্রমিকরা অন্য কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। এতে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা। তবে এসময়ে একটু একটু করে ১২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি বাজার হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা চালু রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, ‘‘আমরা আর পারছি না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার শ্রমিককে বাদ দিয়ে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। এখন সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।”
তৈরি পোশাক খাতের কয়েক দশকের উত্থান-পতনের গল্পে বর্তমানে সবচেয়ে ভালো মানের বেশি সংখ্যক সবুজ কারখানার মালিক বাংলাদেশ। তবে, চলমান কারখানা সংস্কার, ন্যূনতম বেতনের আর্থিক চাপ আর মানে ও মূল্যে টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিতেও বাধ্য হচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
বিজিএমইএ’র তথ্য, গেল ৪ মাসেই কারখানা বন্ধের কারণে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। তবে এই বিপুল শ্রমিকের অল্প সংখ্যক ছাড়া বেকার নেই কেউই। এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কেই সক্ষমতা বাড়ছে পোশাক খাতের।
ইন্ডাস্ট্রি অল, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, নির্ধারিত কোন তথ্য নেই যে এতো শ্রমিক বেকার আছে। কিছু থাকতে পারে, তবে ঢাকার মধ্যে যে কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে, সেখানে কিছু শ্রমিক বেকার আছে, কারণ তাৎক্ষণিক একজন শ্রমিকের অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে এই শ্রমিকরা যদি স্থান পরিবর্তন করে, তাহলে চাকরি পাবে। কারণ সাভার, বা গাজীপুরে কিন্তু আমরা সেভাবে কোন বেকার শ্রমিক দেখি না।
নতুন কারখানা গড়ে ওঠা ও কারখানা সম্প্রসারণে হয়তো ধাক্কা লাগছে না প্রায় ৪৪ লাখ পোশাক শ্রমিকের চাকরির বাজারে, প্রভাব পড়ছে না রপ্তানি আয়ে। কিন্তু যে গতিতে ব্যবসা বাড়ার কথা সেই গতি পাচ্ছে না শিল্প। এমনকি বাজার ধরতে বড় কারখানাগুলোও লিপ্ত হচ্ছে অসম দামের প্রতিযোগিতায়। যা দীর্ঘ মেয়াদে পিছিয়ে দেবে এই খাতকে, এমন আশঙ্কা বিজিএমইএ’র।
বিজিএমইএ আরডিটিআই সদস্য আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, এই দুই লাইন, চার লাইল কারখানগুলো বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়া, এটা কিন্তু একটা অশনি সংকেত। ১২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা চলে গেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ছোট ছোট কারখানারগুলো ব্যবসা হারাচ্ছে। তার সুযোগগুলো অন্য বড় কারখানাগুলো নিয়ে নিচ্ছে। কাজেই ব্যবসা থাকছে, কিন্তু ব্যবসা যে গতিতে বাড়ার কথা সেই গতিতে বাড়ছে না। কনজুমারের ধারা বদলে গেছে। কনজুমার অল্প কিনে। এই অল্প ক্রয়ের জন্য দরকার আমাদের ক্ষুদ্র মাঝারি কারখানাকে টিকিয়ে রাখা।
তবে, সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের এই খাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অটোমেশনের ধাক্কা যেন বড় আকারে শ্রমিকদের মধ্যে না পড়ে, সেজন্য শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
খোলাডাক / এ এ