বাঙালির যৌন হতাশা
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ
অপ্রিয় হলেও সত্য, বাঙালি প্রচন্ড রকমের যৌন হতাশা নিয়ে দিনাতিপাত করে। এই যৌন হতাশা এতটাই মারাত্মক যে, কখনো সখনো তা পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জন্মের পর থেকে শিশু যখন যৌনতা নিয়ে পরিবারের মানুষে মধ্যে লুকোচুরি দেখে। যৌনতার কথা উঠতেই বড়রা যখন এড়িয়ে গিয়ে বলে ওসব বলা ‘পাপ’, তখন থেকে ওই হতাশার জন্ম হয়। শিশুকাল থেকে নিজের ভেতর হতাশা লালন পালন করে বড়বেলায় এসে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই যৌন হতাশা ‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজওয়ার্ডার’- এর অন্তর্ভূক্ত।
এই যৌন হতাশা কাটানোর জন্য প্রতিদিনই অথবা দিনে একাধিকবার যৌনকল্পনা, যেমন মাস্টারবেট বা পর্ন দেখার মতো অমোঘ যৌনকাজে জড়িয়ে থাকে।
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ বাঙালিই যৌন আলোচনায় সুখ পায়, অন্যের যৌনজীবন নিয়ে কুৎসা রটায়; বড়দের আলোচনার বড় অংশ যৌনতা বিষয়ক। কিন্তু পরিচ্ছন্ন ভন্ড তারা; তাদের কাছে এ-সম্পর্কিত কিছু জানতে গেলে তারা এমন ভাব করে যেনো তারা যৌনতার কথা কখনো শোনেনি; কাম কী তারা জানে না।’
যৌনতার প্রসঙ্গ টানলেই যে বাঙালি থতমত খেয়ে যায়। এই থতমত খাওয়া বাঙালিই কিন্তু নীল ছবির দুনিয়ায় নিজেদের সঁপে দেয়। পর্ণ ছবির দেখার সময় তারা কখনো ভাবে না, এটা কেবলই একটা সিনেমা মাত্র।প্রদর্শিত যৌনতা বাস্তবে কোথাও না-ও হতে পারে।
সেটা না ভেবে, ওই ছবির চরিত্রের সাথে নিজেকে মিলিয়ে ফেলে। ভাবে, একদিন আমার ভেতরের সিংহটাও এভাবে জেগে উঠবে। তারপর কল্পনায় কোনো নারীকে ভেবে বাথরুমে হাপিত্যেশ করে।
তার মানে কি বাঙালি আজও সাবালক হতে পারেনি? এর সহজ উত্তর হয়ত আপনি জানেন। যৌনতা নিয়ে লুকোচুরি কেবল একটা কথাই প্রমাণ দেয়, বাঙালি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সাবালক হয়ে ওঠেনি।
বাঙলার মানুষ হস্তমৈথুন করে যৌন সমস্যায় ভুগবে। অথচ এই সমস্যা সমাধানে তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে লজ্জা পাবে। এমনকি যারা যৌন চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদেরকেও এরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যকরবে। অথচ এরাই আবার অনলাইনে ‘যৌন চিকিৎসার সহজ উপায়’ লিখে সার্চ করবে।
রক্ষনশীলতার দোহাই দিয়ে এই যৌন হতাশা বাঙালি নিস্তেজ মেরে গেল। আর তাই এই বাঙালি অন্যের যৌন জীবন, প্রেমিকার নিতম্ব আর নায়িকার স্তন দেখে নিজের বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়।
লেখক: সাংবাদিক