মেস ভাড়া যখন অভিশাপ..!
এমরান হোসাইন নিখিল : ঢাকার এক অভিজাত এলাকায় হাবিবের মেস, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় বাধ্য হয়েই তাকে এইখানে থাকতে হচ্ছে। হাবিবসহ দশজন একসাথে তিনটি বেডরুম শেয়ার করে থাকে।অভিজাত এলাকা বিধায় জনপ্রতি তিন হাজার টাকা করে তাদের বাসা ভাড়া পরিশোধ করা হয়।
হাবিবের মতই বাকিরা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা গরীব বাবা-মার আশার প্রদীপ, কেউ টিউশনি করে কেউবা ছোটখাটো পার্টটাইম চাকুরী করে ভাড়া পরিশোধ করে থাকে। এইভাবেই শহরে অর্ধেকটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছাত্র-ছাত্রী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
করোনার ছোবল হাবিবদের জীবনে অভিশাপ হয়ে আসে। মাসের মাঝামাঝি দেশে লকডাউন হওয়ায় শেষ মাসের টিউশনির টাকাও পাওয়া হলো না। মাস খানেক বাড়িতে অলস সময় কাঁটছে। দিন যত যাচ্ছে মাসের শেষে বাসা ভাড়ার চিন্তা তীর হয়ে হাবিবের বুকে তেড়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ না হলে সেপ্টেম্বর অবধি স্কুল-কলেজ বন্ধ দেওয়ার ঘোষণা হয়। এতে হাবিবের মত অসংখ্য শিক্ষার্থীর জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আকাশ ভেঙে মাথায় পড়া। কারন তারা যে মধ্যবিত্ত…! বাসায় বসে থেকে টানা ছয়মাস বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করা আকাশকুসুম চিন্তা ছাড়া কিছুই না। যেখানে হাবিবের পরিবারের অবস্থা মারাত্মক খারাপ সেখানে তার গরীব বাবার পক্ষে এই ব্যয় বহন করা মোটেই সম্ভব না।
তাছাড়া এই অনিশ্চয়তায় হাবিবরা চাইলেও বাসা ছেড়ে দিতে পারছে না। ৬ মাস বাসায় না থেকে বিদুৎ -গ্যাস ব্যবহার না করেই বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হলে হাবিবের মত অসংখ্য শিক্ষার্থী স্বাভাবিক জীবনে ফিরা হবে অনিশ্চিত, বন্ধ হতে পারে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ।
হাবিবের মত অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভরসা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাইলে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মানবিক বিবেচনায় বাড়ির মালিকদের ভাড়া মওকুফের অনুরোধ জানাতে পারে অথবা কমপক্ষে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া মওকুফের প্রজ্ঞাপন হতে পারে। এতে হাবিবদের সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।
হাবিবরা আস্থা রাখে সৃষ্টিকর্তায়, কারণ সৃষ্টিকর্তায় জানে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। কেননা জীবন ক্ষণে ক্ষণে বাঁক বদলায়। খাদের কিনারে দাঁড়িয়েও শেষ মুহূর্তে ফেরার পথ খুঁজে পায় মানুষ। জীবন নেয় নতুন আরেক বাঁক। এইতো জীবন, মায়াবী অদ্ভুত রহস্যে ঘেরা। না হয় অভিশাপ হবে মেস ভাড়া…!
_লেখক
এমরান হোসাইন নিখিল
এল.এল.এম অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।