জীবনের ঝুঁকিতে গ্রাম থেকে এসেও চাকুরী হারাচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদন : মুঠোফোনের মাধ্যমে চাকরিতে যোগদানের বার্তা পেয়ে যোগদান করতে আসলেও শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। এদিকে বিজিএমইএ জানিয়েছে, ঢাকার বাইরে অবস্থানরত পোশাক শ্রমিকদের এখন ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই, বেতন পৌঁছে দেয়া হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, আপাতত ঢাকার ভেতরে অবস্থানরত শ্রমিক দিয়েই সীমিত আকারে পোশাক কারখানা চালাতে হবে।
একাধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গত সোমবার তাদের মুঠোফোনে কাজে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া অধিকাংশ শ্রমিক তাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এই বার্তা পেয়ে বেশিরভাগ শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে ও ছোট ছোট যানবহনে করে ঢাকার দিকে রওনা দেয়। সরাসরি যানবাহন না থাকায় ঢাকায় আসতে একদিন দেরি হয়ে যাওয়ায় একদিন পরে বুধবার কাজে যোগদান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু একদিন পরে কেন তারা চাকরিতে যোগদান করলেন এই অযুহাতে তাদের কাজে যোগদান করতে দিচ্ছে না।
চাকরি হারানো সোহেল রানা বলেন, আমাদেরকে একদিন আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় পরেরদিন কাজে যোগ দিতে হবে। এই অবস্থায় আমি গ্রাম থেকে রওনা দিয়েও সময় মত ঢাকায় পৌঁছাতে পারি নাই। তাদের নির্ধারিত সময়ের একদিন পরে দিন কাজে যোগদান করতে চাইলে আমাদেরকে আর কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে আসলে তারা চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে চায়। ছাঁটাই করার মত কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে এই ফাঁদ পেতেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিক দিয়ে সীমিত আকারে গার্মেন্টস চালানো হচ্ছে বলে মালিক পক্ষ জানিয়েছেন। সীমিত আকারে গার্মেন্টস খোলা রাখার বিষয়ে মালিকপক্ষ বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা গার্মেন্টস খোলা রেখেছেন। গার্মেন্টস কর্মীদের মার্চ মাসের বেতন ৯৮ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও দেওয়া হবে এবং এপ্রিল মাসের বেতনও দ্রুত সময়ে দিয়ে দেওয়া হবে।
ঢাকার বাইরে থাকা পোশাককর্মীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে আপনারা ঢাকায় আসবেন। আপনাদের বেতনে কোনো সমস্যা হবে না বলে মালিক পক্ষ নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক বুধবার বলেছেন, ঢাকার বাইরে অবস্থানরত পোশাক শ্রমিকদের এখন ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই, বেতন পৌঁছে দেয়া হবে।
বিজিএমইএ জানায়, সহজে ঘরে বসে বেতন-ভাতা পান এ জন্য মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রায় ২৫ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা। দেশের যেখানেই থাকুক না সেখানেই বেতন পৌঁছে দেয়া সম্ভব।
মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি ছালেহা ইসলাম শান্তনা বলেন, আমাদের কাছে অনেক শ্রমিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তাদের ফোন করে ঢেকে এনে কাজে যোগ দিতে দিচ্ছে না। তাদের বেশির ভাগ ঢাকার বাহিরে অবস্থান করছিল। তারা অনেক কষ্ট করে ঢাকায় এসেও চাকরি বাঁচাতে পারছেন না। আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় নাই এর বাহিরেও অনেক কারাখার মালিক শ্রমিকদের সাথে এই কাজ করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৮ মার্চ থেকে দেশের সব পোশাক কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। গত ৫ এপ্রিল কারখানা খুললেও বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে ওইদিন গভীর রাতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বিকেএমইএ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সরকার সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ালে বেশিরভাগ কারখানা সাধারণ ছুটির পরিবর্তে লে-অফ ঘোষণা করে।
আইন অনুযায়ী, লে-অফ ঘোষণাকালে শ্রমিকরা মূল বেতনের অর্ধেক ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। তবে লে-অফ ৪৫ দিনের বেশি দীর্ঘায়িত হলে বেসিকের চার ভাগের এক ভাগ বেতন পাবেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে বেতন কমতে থাকবে। তবে শর্ত হলো শ্রমিককে অবশ্যই কারখানায় এক বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় কাজ করতে হবে।
এছাড়া লে-অফ থাকা শ্রমিক উৎসব ভাতা পাবেন না। ধারণা করা হচ্ছে, ২ মের পরও অন্তত ৭-৮ লাখ পোশাক শ্রমিক গ্রামে অবস্থান করতে পারেন। আবার গড়ে ১০ শতাংশ শ্রমিক নিয়মিত চাকরি পরিবর্তন করেন। এ কারণে আরো অন্তত ৪-৫ লাখ শ্রমিক লে-অফের অধীনে পড়বে না। এতে পোশাক খাতের অন্তত ১২-১৩ লাখ শ্রমিক বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
খোলাডাক / এনএস/