বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » » পরিচয় গোপন রেখে কলকাতায় মাজেদের সংসার
পরিচয় গোপন রেখে কলকাতায় মাজেদের সংসার
বিশেষ প্রতিনিধি : আলী আহমেদ পরিচয়ে ভারতের কলকাতায় দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ। সেখানে তার একটি ভারতীয় পাসপোর্ট ছিলো। সেই সুবিধা নিয়ে নিজের চাইতে বয়সে ৩২ বছরের ছোট স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সেই সংসারে ৬ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তানও রয়েছে তার।
গত শনিবার রাতে খুনি মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর গতকাল সোমবার ‘ঘাতকের ডেরা’ শীর্ষক এক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে কলকাতার ‘বর্তমান পত্রিকা’। তাদের প্রথম প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো- ‘বঙ্গবন্ধুর ঘাতক মাস্টারমশাই! বিশ্বাস হচ্ছে না পার্ক স্ট্রিটের সেই মহল্লার।’
ওই প্রতিবেদনে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনে ঘাতক মাজেদের আত্মগোপনের দিনগুলোর বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘মহল্লা তাঁকে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখেনি। হিংসা-বিবাদ তো দূর-অস্ত! লোকটা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নিয়ম করে। সেই তাদের মাস্টারমশাই নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনি! এখনো ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না লকডাউনের পার্ক স্ট্রিট। এই পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক আব্দুল মাজেদ।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আব্দুল মাজেদকে বাংলাদেশি পুলিশ ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে। এরপর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে রীতিমতো অবাক বনে যান পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা! পার্ক স্ট্রিটের সবাই আবদুল মাজেদকে চেনে ‘আলী আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই’ হিসেবেই। এখানকার লোকজন জানতেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাস করেছেন ‘মাস্টার মশাই’। টিউশনি করে সংসার চালাতেন তিনি। প্রথমে তালতলায় ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে নিজের চাইতে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন আব্দুল মাজেদ। বর্তমানে তাদের ৬ বছরের এক মেয়ে আছে। কিছুদিন ধরেই মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না। সে কারণে গত জানুয়ারিতে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করান।
বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন আব্দুল মাজেদ। এরপর আর ফিরে আসেননি। সে কারণে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মাজেদের স্ত্রী সেলিনা বেগম পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর মাজেদের খোঁজ করতে নেমে পড়ে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ। তবে পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটেও মাজেদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায় পুলিশ সদস্যরা। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক নারীসহ তিন শিশুর ছবি পায়।
সেলিনা বেগম পুলিশকে বলেন, ‘মাজেদ ব্যাগের মতো তার অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতো না। মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতো না। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশনের দোকানে আড্ডা দিতো। বাড়ির মূল দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকতো। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এভাবেই ১৮-১৯ বছর কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলো আব্দুল মাজেদ।’
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর, মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ভয়ঙ্কর ঘাতক আব্দুল মাজেদ ভারতে লুকিয়ে থাকতে পারেন— এমন দাবি বিভিন্ন সময় ভারতের কাছে তুলে এসেছিলো বাংলাদেশ। ভারত এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছিলো। গত ৭ এপ্রিল মাজেদ ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিলো, পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি হঠাৎ কিভাবে দেশে এলো? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, ‘হয়তো করোনা ভাইরাসের ভয়ে চলে এসেছেন।’
সংকলিত