মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » » সাঁজ-গোজ ছাড়াই আজ পহেলা বৈশাখ
সাঁজ-গোজ ছাড়াই আজ পহেলা বৈশাখ
সাঁজ - গোজ ছাড়াই আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনে নতুন বছরের প্রথম দিন, নতুন খবর। সকালের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হলো বাংলা ১৪২৭ সালের। তবে আজকের এই বৈশাখ বাঙালির জীবনের ভিন্ন বৈশাখের চেয়ে আলাদা। বৈশাখে এমনটা এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। এদিনটি ছিল এক মহা উৎসব, আনন্দের।কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক এই দুর্যোগের সময় বাঙালির জীবন আজ অবরুদ্ধ। এ পহেলা বৈশাখের বাংলা ঢোলের বাজনা বাজবে বাঙালি জাতির মনে মনে। তবে প্রাণে প্রাণ মিলবে রাস্তা বা খোলা ময়দানে নয়, যার যার বাসায় কিংবা ফেসবুক, টুইটার ও ম্যাসেঞ্জারে। আজকের উৎসব হবে বাংলার ঘরে ঘরে, নিজের মতো করে।
গত সনের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসবে ঘরে ঘরে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দর, সব জায়গায় আজ দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ তবে সেটা একটু অন্যভাবে। পান্তা-ইলিশ খাওয়া, মুড়ি-মুড়কি, মণ্ডা-মিঠাই সবই হবে, তবে তা যার যার ঘরে।
পহেলা বৈশাখে ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সীমিত আকারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- এ প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে দুই দিন আগে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়। এতে জানানো হয়, আজ পহেলা বৈশাখ ভোর ৭টা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এ অনুষ্ঠানের ফ্রেশ ফিড পাবে।
এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আরেকটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত একটি বক্তব্য ছাড়াও থাকবে বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি আয়োজন। ফেসবুকে ডিজিটালি বর্ষবরণের আয়োজন করেছে উদীচী। অন্যদিকে জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্য করে এবারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবারের পহেলা বৈশাখের রঙটাই পাল্টে দিয়েছে। ভাইরাসটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই মহাদুর্যোগের মধ্যেই বৈশাখ আসায় সরকারি আদেশেই এদিন খোলামাঠে সকল আয়োজন বন্ধ। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আয়োজন রমনা বটমূলে প্রভাতী আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, শিশু পার্কের সামনে ঋষিজের অনুষ্ঠানসহ সব বন্ধ করা হয়েছে। বাঙালি আজ ঘরে বসেই তার সাধ্যমতো খাবার আয়োজন করবে। পড়বে নতুন পোশাক। মোবাইল মেসেজ বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নেবে। ঘরে বসে থাকলেও তাদের মনে সত্যি সত্যি খেলে যাবে বৈশাখের রং।
আজকের অন্যরকম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষ্যে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
খোলাডাক/ কন্ঠ / ডেস্ক.