লক্ষ্মীপুরে ইটভাটার মালিকদের করোনার ভয় নেই
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : মহামারী করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত সারা বিশ্ব।সেই মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বাংলাদেশও বাদ নেই । চলছে করোনা সংক্রমে সারা দেশে অবরোধ। প্রতিটি নাগরিক কে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ যেন তিন ফুট দুরে থেকে প্রয়োজনীয় কাজ করেন। দেশের প্রতিটি অঞ্চলকে করা হয়েছে নজরবন্দি। পুলিশ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, বিডিআর সহ সকল বাহীনি যখন রাস্তায় ব্যাস্ত ঠিক তখনি হরহামেশাই চলছে ইট ভাটাগুলো।
বলছি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগন্জ, কমলনগর, রামগতিতে গড়ে উঠা বৈধ অবৈধ ইটভাটা গুলোর কথা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নিয়ে প্রশাসনের অন্যান্য ব্যস্ততার সুযোগে ইটভাটার মালিকরা যেন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। ধুলোবালিতে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে৷ যেখানে করোনা ভাইরাসের মুল উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশিঁ, শ্বাসকষ্ট। এসব হলে সাধারণ করোনার ঝুঁকি থাকে। অথচ ইট ভাটার শ্রমিকরা ব্যস্ত ভাটায় ধুলোবালিতে কাজ করতে। তারা রীতিমত ধুলোবালিতে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ইট ভাটা চালু রাখতে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের চাপ দিচ্ছে। কাজ না করলে নির্যাতন থেকে শুরু করে জগন্য কাজও করে বসে। নিরুপায় হয়ে মাঝি ও শ্রমিকরা কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে , করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে ইটভাটার শ্রমিকরা। কারণ তারা সার্বক্ষণিক ধুলো-ময়লার মধ্যে থাকেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। শ্রমিকদের মধ্যে আক্রান্ত কেউ হলে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে। কারণ, করোনার জীবাণু ধুলোবালিতে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার কারণে সবার মধ্যে এর সংক্রমণের আশঙ্কাটাই বেশি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর মার্টিন গ্রামের বেশ কয়েকজন ইটভাটা শ্রমিক এরই মধ্যে ইটভাটা থেকে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। দেশজুড়ে লকডাউন অবস্থা চলার কারণে, মানুষ হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবাও ঠিকমতো নিতে পারছে না। কারণ, হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারগণ মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন।
এরমধ্যে জ্বর,সর্দি, কাশিঁ নিয়ে কেউ হাসপাতালে গেরে ঠিকমত চিকিৎসাও পাচ্ছে না। তারা হন অবহেলার পাত্র। ইতিমধ্যে হাসপাতাল গুলোতে স্বাভাবিক রুগির চাহিদাও কম দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর বেড খালি দেখা যাচ্ছে। এমন জটিল অবস্থায় কঠিনভাবে অসুস্থ হয়েও হাসপাতালের দ্বারস্থ হন না রোগীরা। তাদের মধ্যে এ ইটভাটার শ্রমিকরাও রয়েছেন।
ইটভাটার মাঝিদের সাথে কথা বললে জানা যায়, তারা বলেন সঠিক সমযে ভাটার কাজ না তুলতে পারলে মালিকরা অনেক মানসিক নির্যাতন করেন। মাঝে মধ্যে গায়েও হাত তোলেন।কাজ তোলার জন্য খুব চাপ সৃষ্টি করে।কোন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে বাড়িতে গেলে কেন যায়, তারা কাজ ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে।এমন চাপ সৃষ্টি করে ঝামেলা করেন।
তারা আরও জানান, তারা দেখছেন সরকার সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে। কারন দেশে কি রোগ এসেচে। কিন্তু তারা পারে না। তাদের দাবি প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে হযত সম্ভব হবে। তাহলে এ রোগ থেকে একটু হলেও তারা রক্ষা পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারি, ভবানীগঞ্জ, তেওয়ারীগঞ্জ, কমলনগরের চর ফলকন, হাজিরহাট, চর লরেন্স, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইটভাটা চালু রয়েছে।
অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে এই সব ইটভাটা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের এ নিষেধের তোয়াক্কা না করে ইটভাটাগুলো এখনো চালু রেখেছেন ভাটার মালিকরা। এছাড়াও মালিকরা শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করান।
জেলা সূত্রে তথ্য নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলাতে প্রায় ৮০ টার মত ইট ভাটার কাজ চলছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক বিভিন্নভাবে জড়িত। তাহলে এসব শ্রমিকরা যদি করোনায় অসুস্থরহন তাহলে পুরো জেলাতে এটা ছড়িয়ে পড়বে। জেলা প্রশাসন ইটভাটাগুলো বন্ধে নোটিশ জারি করলেও এগুলো মালিকরা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে এসব ইটভাটা চালু থাকার কারণে অবাদে রাস্তায় চলছে ট্রাক্টর ট্রলি । ট্রাক্টর ট্রলির কারণে পরিবেশ অবস্থাও মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এতেও মারাত্মক পরিবেশ দূষন হচ্ছে। এসবের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হযে পড়ছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, ইট ভাটা গুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। করোনা মোকাবেলা এসব ভাটা গুলো বন্ধ করা খুবই জরুরী মরে করছি।জেলা, উপজেলা প্রশাসন বিগত কয়েকদিন যাবত করোনা নিয়ে জনগনকে সচেতন করছে। সবাই কে স্ব স্ব অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান,করোনা প্রতিরোধে এর মাঝে হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ইটভাটার মালিকরা যদি স্ব-উদ্যোগে ইটভাটাগুলো বন্ধ করতো, তাহলে অনেক সুবিধার হতো। ইটভাটা গুলো কিছুদিন বন্ধ রাখতে কাজ নজর বাড়াতে হবে। কেউ যদি আইন অমান্য করে ইটভাটা চালু রাখে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোলাডাক / এনএন