নিজের মৃত্যু নিজের আবিষ্কারেই
অনলাইন ডেস্ক
‘ড. জেকিল অ্যান্ড মি হাইড’-এর গল্পটা নিশ্চয় আপনাদের সকলেরই জানা। কী ভাবে নিজের বানানো সেরাম খেয়ে ডা. জেকিল ভয়ানক দানব হাইডে পরিণত হতেন এবং কুকর্ম করতেন। গল্পের শেষে সেই সেরামেই মৃত্যু হয়েছিল তার। এটা গল্প হলেও বাস্তবে একই রকম অনেক ঘটনা আছে, যা জানলে অবাক হয়ে যাবেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন এমন অনেক উজ্জ্বল বৈজ্ঞানিক রয়েছেন, যাদের মৃত্যুর কারণ তাদেরই সব আবিষ্কার। এরকমই কিছু মানুষের খোঁজ করলাম আমরা।
নিজের বানানো গাড়ির দুর্ঘটনায় নিহত স্ট্যানলি
ফ্র্যান্সিস এডগার স্ট্যানলি এবং তার যমজ ভাই ১৮৯৬ সালে আবিষ্কার করেছিলেন স্ট্যানলি স্টিমার অটোমোবাইল। ১৯০৬ সালে তারা ১৯০৬ মাইল মাত্র ২৮ সেকেন্ডে পার করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। তাদের গাড়ির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২৭ মাইল। ১৯১৮ সালে, স্ট্যানলি মোটর বিক্রি করে দেন দুই ভাই। সেই একই বছরে ফ্র্যান্সিস এক দিন মনের আনন্দে তাঁরই আবিষ্কার করা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ সামনে কিছু একটা দেখতে পান। সেটাকে এড়াতে গাড়িকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে গাড়ি গিয়ে সোজা ধাক্কা মারে সামনে পড়ে থাকে কাঠের তক্তার উপর। আর ব্যস, গাড়ি পুরো উল্টে পাল্টে যায়। মৃত্যু হয় ফ্র্যান্সিসের।
হট এয়ার বেলুনে মৃত্যু রোসিয়ের
জন ফ্রানসোয়াজ পিলোট্রো দো রোসিয়ে প্রথম মানুষ ছিলেন যিনি হট এয়ার বেলুন চড়তে স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছিলেন। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয় হওয়ার তাগিদে তিনি এই প্রস্তাব নাকচ করেননি। ১৭৮৩ সালে প্রথম হট এয়ার বেলুন চড়ার সুবাদে উনি রীতিমতো তারকা হয়ে যান। পরবর্তীকালে আরও দু’জন হট এয়ার বেলুন চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পার করায়, তার জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও কমে যায়।
হিংসেয় জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যান রোসিয়ে। আর তার হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করতে তৈরি করে ফেলেন রোসিয়ে বেলুন। আগের বেলুনগুলোর চেয়ে অনেক উন্নত ছিল তার এই বেলুন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইংলিশ চ্যানেল পার করার সময় বেলুনেই তার মৃত্যু হয়। তবে এর কারণ এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।
নিজের তৈরি প্রিন্টিং মেশিনে পা আটকে যায় উইলিয়াম বুলকের
উইলিয়াম বুলক রোটারি প্রিন্টিং মেশিনের উন্নত সংস্করণ বানান ১৮৩৬ সালে। আধুনিক খবরের কাগজের প্রথম প্রিন্টিং প্রেস বলতে এখনও এই মেশিনকেই বোঝানো হয়।
১৮৬৭ সালে মেশিন চালানোর সময় হঠাৎ করেই তার পা মেশিনের গিয়ারের মাঝখানে আটকে যায়। তার পর সঠিক চিকিৎসার অভাবে পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়। পা কেটে বাদ দেওয়ার সময় অপারেশন টেবলেই মারা যান উইলিয়াম বুলক।
জগিং-এর পৃষ্ঠপোষক জিম মারা গেছিলেন জগিং করার সময়
জগিংকে জনপ্রিয় করেছিলেন জেমস ‘জিম’ ফিক্স। ফিটনেসের উপর প্রচুর বই লিখেছেন তিনি। ‘দ্য কমপ্লিট বুক অব রানিং’ বইটিও তারই লেখা। উনি জগিং শুরু করেছিলেন সুস্থ থাকার জন্য। ওঁর বাবার ৩৫ বছর বয়সে হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে এবং মাত্র ৪৩ বছরেই উনি মারা যান। জিম ফিট থাকতে চাইতেন, যাতে ওঁর বাবার মতো তাকে ভুগতে না হয়। কিন্তু কী আশ্চর্যভাবে একদিন সকালে জগিং করার সময়ই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান উনি। একেই বোধহয় বলে ‘ম্যান প্রোপোসেস, গড ডিসপোসেস!’
উড়ন্ত গাড়ির ডানা খুলে মৃত্যু হয় হাল ও হেনরির
হেনরি স্মোলিঙ্কস্কি এবং হাল ব্লেক ‘এভিই মিজার’ নামের একটি ফ্লায়িং কার বানিয়েছিলেন। এই যানটির আবার ডানা আলাদা ভাবে খোলা যেত। তারা ভেবেছিলেন তাদের এই যানটি হেলিকপ্টারের ছোট সংস্করণ হিসেবে দারুণভাবে ব্যবহার করা যাবে। ছোটখাটো দূরত্ব অনায়াসে পাড় করে দিতে পারবে। এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারের মতোই ছাড়বে, আবার অন্য জায়গার এয়ারপোর্টে এসে ল্যান্ডিং করবে। তারপর ডানা খুলে গাড়ির মতো এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যাবে। প্ল্যানিং-এর দিক থেকে কোনও অসুবিধে ছিল না। কিন্তু গোল বাঁধল উড়ন্ত গাড়িটি পরীক্ষা করার সময়। টেস্ট রান চলার মধ্যেই গাড়ির ডানাগুলো খুলে পড়ে যায় এবং মৃত্যু হয় দুই আবিষ্কারকের।