সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে গেছে হারিকেন
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : “হারিকেন” এক সময়ের জনপ্রিয় আন্ধার রাতের বাতি। এটি ছাড়া গ্রাম কিংবা শহরের আলো চিন্তায় করা যেত না। গ্রামের প্রতিটি ঘরে দেখা মিলত এ হারিকেন। হারিকেন ছাড়া গ্রামের ঘরের আলো কোন মতেই ফুটে উঠত না। হারিকেন ছিল বাংলার গ্রামান্চলের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য এখন আর নেই।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর-রায়পুর- রামগন্জের প্রতিটি বাজার বা গ্রামের কোন ঘরেই দেখা নেই এ হারিকেন। বিদুৎ এর আগমনে হারিয়ে গেছে এ হারিকেন। হাওর,বাওর সবখানেই দেখা মিলছে না এ হারিকেন।
হারিকেন আর কুপি বাতি ছিল গ্রাম আর চর বাসির একমাত্র মুল ভরসা। সময়ের গতিতে এসব এখন অতীত হয়ে গেছে। সময়ের পরিবর্তনে ঘরে ঘরে জ্বলছে বিদুৎ আর সৌরবাতি।
মেঘনার কোলে রামগতি-কমলনগর-জেলা সদরের রাতের আধারে চোখে পড়ত কুপি আর হারিকেনের আলো। সন্ধ্যা নামতেই পড়ালেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ত হারিকেন আর কুপি বাতির আলো। কুপি আর হারিকেন জ্বলত কেরোসিন তৈলের দ্বারা। সাথে বাতি জ্বালাতে( কোর) তাগি লাগতো।
সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তির যুগে প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছে গেছে বিদুৎ আর সৌর বাতির আলো। এতে শুধু রাতের অন্ধকারই দূর হয়নি, আলোকিত হতে শুরু করেছে শহর ছাড়া কয়েকটি চরের পরিবেশও। বাতি জ্বালানোর পাশাপাশি অন্য কাজেও বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে।
ঘর বা বাড়ি ছাড়াও যানবাহনে ব্যবহার করা হত এ হারিকেন। হারিকেন ছাড়া রাতের বেলায় রিকসা যাতায়াত ছিল দুরঃবিহস। প্রতিটি রিকসায় দেখা মিলত এ হারিকেন। রাতে অন্ধকারে মিট মিট করে জ্বলত এ হারিকেন। এখন সময়ের পরিবর্তনে মোটর যান তৈরি হওয়াতে দেখা মিলছে না এ হারিকেন।
রামগতির চর আলেকজান্ডার রিকসা চালক মো. কালাম বলেন, আগে রিকসা চালাতে রাতের বেলায় হারিকেন ছিল একমাত্র ভরসা। সময় পরিবর্তন হয়েছে। তাই হারিকেন আর দেখা যাচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বিদুৎ আসার কারণে হারিকেন আর কুপি বাতির হারিয়ে গেছে। এগুলোর দেখা মিলছে না।
লক্ষ্মীপুরে চর আব্দুল্লাহ, চর বাদাম,চর শামসুদ্দিন, চর কাদিরা, চর রমিজ,চর রুহিতা, চর মনসা, আন্দারমানিক সহ বেশ গ্রামে এখন হারিকেন বা কুপির দেখা নেই। বিদুৎ ও সৌরবাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে এসব গ্রাম।
হারিকেন সম্পর্কে জানতে চেয়ে ছিলাম শিক্ষক সানা উল্লাহ সানুর কাছে। তিনি জানান, যুগের পরিবর্তন হয়েছে।মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধির পাচ্ছে। বিদুৎ ঘরে ঘরে পৌছে গেছে। তাই আগের যুগের হারিকেন বা কুপি এখন নেই বললেই চলে। এগুলো এখন আর চোখেই পড়ছে না। গ্রাম বা শহর বা দুর্গম চর যেটাই বলেন, মানুষ এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে বিদুৎ নেই সেখানে সৌরবাতির দেখা মিলছে।
নদীতে মাছ শিকারী প্রতিটি নৌকাতে হারিকেনের দেখা মিলত। এখন সেটাও মিলছে না। প্রতিটি নৌকাতে সৌর বাতি জ্বলছে। তাই বলা চলে হারিকেন এখন বিলুপ্তি পথে। মোটেও দেখা নেই এ হারিকেন।
আব্বাস মাঝি বলেন, আগে তারা রাতের বেলায় নৌকাতে হারিকেন জ্বালাতাম। এখন আর সেটা নেই। এখন সৌর বাতি জ্বলছে। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে গেছে হারিকেন।
হারিকেনের আলোতে মাঝি গান গাইত।মনের সুখে দাড়ঁ বাইত।গান ধরত মাঝি, “মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে, বাত্তির অন্ধকার। এই জীবনে চাইলাম যারে সেই হইল না আমার”এখন আর মাঝি হারিকেনের আলোয় গান ধরে না।
হারিকেন জ্বালাতে তৈলের প্রয়োজন হত। তখন কেরোসিন তৈল দিয়ে হারিকেন, কুপি জ্বালানো হত। এখন হারিকেন, কুপি বিলুপ্তির কারণে কেরোসিন তৈলও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। সময় যেখানে পরিবর্তন, যুগও সেখানে প্রযুক্তির।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ আসার কারণে মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আগের মানুষ হারিকেন আর কুপির উপর নির্ভরশীল ছিল। সময়ের পরিবর্তনে মানুষ পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখন রাতের আধারে বিদুৎ আর সৌরবাতির আলো দেখা যাচ্ছে। চোখে এখন হারিকেন বা কুপি দেখা যাচ্ছে না। হারিকেন বা কুপি এখন বিলুপ্তি হয়ে গেছে।
খোলাডাক/ এনএস