কোন দেশে কত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে
ফিচার ডেস্ক
ঐতিহাসিকভাবে আরাকানী ভারতীয় বলা হয় রোহিঙ্গাদের। এরা নানান সময় বিতড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। পাশাপাশি পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গার বাস।
আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে কোন দেশে কতো রোহিঙ্গা বাস করে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা-
বাংলাদেশ: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে পৌঁছে যায় সাত লাখে। আর আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
পাকিস্তান: দুই লাখের মত রোহিঙ্গা বর্তমানে পাকিস্তানে বসবাস করছেন। ১৯৪২ সালে বর্মায় সামরিক অভিযানের পর তারা পাকিস্তানে যেতে শুরু করেন।
থাইল্যান্ড: মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথ হিসেবে রোহিঙ্গারা থ্যাইল্যান্ডকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করত। এই দেশটিতে এখন এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।
মালয়েশিয়া: ইউএনএইচসিআর এর হিসেব অনুযায়ী ৫৯ হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। দেশটি জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী না হওয়ার রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের স্বীকৃতি দেয়নি। এখন তারা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে।
ভারত: মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতে গিয়ে বসবাস করছে। সীমান্তপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করে পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও আসামে বসবাস করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র: এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজারের মত রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার এই জনগোষ্ঠীকে ২০০২ সাল থেকে সেখানে থাকতে দেয়া হচ্ছে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিকাগোতে বসবাস করে।
ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় ১১ হাজার ৯৪১ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী রয়েছে। মালয়েশিয়ার মতো ইন্দোনেশিয়াও জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী না হওয়ায় তারা প্রথমে রোহিঙ্গাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে এদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়।
নেপাল: নেপালে এখন ২০০ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। বাংলাদেশে ও ভারত হয়ে এরা নেপালে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিকভাবে আরাকানী ভারতীয় বলা হয়। এরা পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি রাষ্ট্রবিহীন ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী। ২০১৬-১৭ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের পূর্বে অনুমানিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করতো। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মের অনুসারি রোহিঙ্গাও রয়েছে।
২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৯৮২ সালের বার্মিজ নাগরিকত্ব আইন অনুসারে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ১৯৮২ সালের আইনে “রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা অর্জনের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও, বার্মার আইন এই সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জাতীয় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে।”
এছাড়াও তাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যেখানে গণহত্যার মত অপরাধের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মায়ানমারের বিশেষ তদন্তকারী ইয়ংহি লি, বিশ্বাস করেন, মায়ানমার পুরোপুরি তাদের দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতড়িত করতে চায়। ২০০৮ সালের সংবিধান অনুসারে, মায়ানমারের সেনাবাহিনী এখনো সরকারের অধিকাংশ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যার মধ্যে অন্তুর্ভূক্ত রয়েছে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেনাবাহিনীর জন্য সংসদে ২৫% আসন বরাদ্দ রয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
খোলাডাক / এসএস