শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Bhorer Bani
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » মতামত » দানবের জন্ম- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রথম পাতা » মতামত » দানবের জন্ম- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
৭২৫ বার পঠিত
শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দানবের জন্ম- মুহম্মদ জাফর ইকবাল

---ছাত্রলীগের ছেলেরা আবরার ফাহাদকে মেরে ফেলেছে (তাকে কীভাবে মেরেছে প্রথমে আমি সেটাও লিখেছিলাম। কিন্তু মৃত্যুর এই প্রক্রিয়াটি এতো ভয়ংকর এবং এত অবমাননাকর যে বাক্যটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল আবরারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমি প্রক্রিয়াটি না লিখি। দেশ বিদেশের সবাই এটা জেনে গিয়েছে আমার নুতন করে জানানোর কিছু নেই।)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমাকে আমার অনেক ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু দেখতে হয়েছে, তরুণ ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু বেশিরভাগ সময়েই অস্বাভাবিক মৃত্যু-দুর্ঘটনায়, পানিতে ডুবে কিংবা আত্মহত্যা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলার একটি ঘটনা ছিল, কিন্তু আমার মনে হয় আবরারের হত্যাকাণ্ডটি তার থেকেও ভয়ানক।

তার কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীরা পালিয়ে গিয়েছিল সম্ভবত এখনও পালিয়েই আছে। কিন্তু আবরারের হত্যাকারী ছাত্রলীগের ছেলেরা পালিয়ে যায় নাই। হত্যাকাণ্ডে শেষ করে তারা খেতে গিয়েছে, খেলা দেখেছে, মৃতদেহটি প্রকাশ্যে ফেলে রেখেছে। অপরাধীরা শাস্তির ভয়ে পালিয়ে যায়, আবরারের হত্যাকারীরা নিজেদের অপরাধী মনে করে না! সরকারের সমালোচনা করার জন্য তারা একজন ছাত্রকে ‘শিবির সমর্থক’ হিসেবে ‘যথোপযুক্ত’ শাস্তি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলটি তাদের জন্য অনেক নিরাপদ জায়গা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের দেখেশুনে রাখে, তাদের নিরাপত্তা দেয়। কেউ যেন মনে না করে এটি শুধুমাত্র বুয়েটের চিত্র, এটি আসলে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র, কোথাও বেশি কোথাও কম।

হত্যাকাণ্ডের পর আমরা আরও একটি নাটক দেখেছি সেটি হচ্ছে ছাত্রলীগের নিজেদের একটি তদন্ত। একটি হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় অপরাধ, সরকার তার তদন্ত করে বিচার করবে, শাস্তি দেবে, সেখানে অন্যরা কেন নাক গলাবে? আত্মবিশ্লেষণ করতে চায় করুক, কিন্তু সেটি কেন গণমাধ্যমের মাঝে আমাদের জানতে হবে? শুধু তাই নয়, আমরা সবাই বুঝতে পারি একজন সন্তানের হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা মায়ের মনের অবস্থা কী থাকে।

সেই সময় খুঁজে খুঁজে অপরাধীদের বের করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার মত মনের অবস্থা থাকে না। আবরারের বাবা-মা তো তার সন্তানকে বুয়েটের শিক্ষকদের হাতে, প্রশাসনের হাতে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার জন্য তুলে দিয়ে এসেছিলেন। লাশ হয়ে যাওয়ার জন্য দিয়ে আসেননি। এরকম একটি ঘটনার পর কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ব্যর্থতার দায়টুকু নিয়ে নিজেরা মামলা করার দায়িত্বটুকু নেয় না? বাবা মা আপনজনকে এই অর্থহীন নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি দেয় না?

আমি ঠিক জানি না আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা জানেন কিনা এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রলীগের উপর কতোটুকু ক্ষুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মত আমার কোনো রকম হেনস্থা সহ্য করতে হয় না, কিন্তু তারপরও আমি যে কোনো সময়ে চোখ বন্ধ করে তাদের বিশাল অপকর্মের লিস্ট তুলে ধরতে পারব। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ ঘৃণার পর্যায়ে চলে গেছে এবং দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যে কয়টি আন্দোলন হয়েছে তার সবই আসলে ছাত্রলীগের প্রতি ভয়ংকর ক্ষোভের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের সভাপতি সিলেটে এসেছিল, ঘটনাক্রমে আমিও সেদিন রাস্তায় এবং তখন একসাথে আমি যত মোটর সাইকেল দেখেছি জীবনে আর কখনো একসাথে এতো মোটরসাইকেল দেখিনি। এরা সবাই ছিল ছাত্রলীগের কর্মী। আমার প্রশ্নটি ছিল খুবই সহজ। একজন ছাত্র এখনো লেখাপড়া শেষ করেনি, তাদের আয় উপার্জন থাকার কথা না, তাহলে তারা কেমন করে এতো মোটর সাইকেল কিনতে পারে?

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড যদি শুধুমাত্র মোটর সাইকেল কেনার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো আমরা হয়তো সহ্য করতে পারতাম। কিন্তু যখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা অবলীলায় তাদের একজন সহপাঠিকে নির্মম অত্যাচার করে মেরে ফেলে, কারণ তাদের বুকের ভেতরে আত্মবিশ্বাস আছে তাদের কিছুই হবে না- সেটা কারো পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। খুবই স্বাভাবিকভাবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে, এর আগে প্রত্যেকবার যখন এরকম হয়েছে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এবারেও কী সেটা করার চেষ্টা করবে? তাদের এখনো কী সেই মনের জোর আছে?

খবরের কাগজে দেখলাম বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় কুষ্টিয়ায় আবরারের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছেন। তার অনেক সাহস আমাদের এতো সাহস নেই, আবরারের বাবা-মায়ের চোখের দিকে আমরা তাকাতে পারব না।

কেমন করে পারব? যে দেশে একজন ছাত্র নিজ দেশকে ভালোবেসে নিজের মনের কথাটি প্রকাশ করার জন্য সহপাঠিদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মারা যায়, কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে না, সেই দেশের একজন মানুষ হয়ে আমরা কেমন করে মুখ দেখাব?

এই দেশে আমরা আর কতো দিন এভাবে দানবের জন্ম দিতে থাকব?

লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক



জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ- কর্মসূচি পালনে বিপাকে ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সানিম
কমলনগরে বহিরাগত যুবক দিয়ে অস্ত্রোপচার, স্বামী-সন্তান নিয়ে আড্ডায় মগ্ন ডা. ফাতেমাতুজ যাহরা
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না-এমপি নজরুল ইসলাম বাবু
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী জাসদের মোশারেফ
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে দু’জনের মনোনয়ন বাতিল
কমলনগরে ডেঙ্গু জ্বর মানে-ই হঠাৎ আতংক
লক্ষ্মীপুরে তৃণমুলে আলোচনায় যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ভুলু
কমলনগরে বিএনপি’র অফিস ভাঙচুর
কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা, বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ র্যালী
জামালপুরে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আ’লীগে মতবিনিময় সভা
জামালপুরে যুবলীগের তারুণ্যর জয়যাত্রা সমাবেশের প্রস্তুতি সভা
সরিষাবাড়ীতে জনতার সাথে মতবিনিময় করেন প্রকৌশলী মাহবুব হেলাল
ঈদের শুভেচ্ছা জানান ভাইস চেয়ারম্যান শিলা
ঈদের শুভেচ্ছায় আ’লীগ নেতা সাজু
“ডেইলি ভোরের বাণী” পরিবারে ঈদুল আজহা’র শুভেচ্ছা