ইচ্ছা না থাকায় হেরে গেল বাংলাদেশ
নতুন খবর : লক্ষ্য খুব বেশি বড় না হলেও জেতার ইচ্ছেই যেন ছিল না বাংলাদেশের। ফিল্ডিং মিসসহ গা ছাড়া ভাব ছিল সফরকারীদের। তবে ৫ ওভারের মাঝেই পাকিস্তানের দুই উইকেট তুলে তাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিল সফরকারীরা।
লাহোরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ শুরু করেছে পাকিস্তান। শোয়েব মালিকের অপরাজিত হাফসেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাবর আজমের দল।
খেলতে নেমে দ্বিতীয় বলে উইকেট উদযাপন বাংলাদেশ। অধিনায়ক বাবর আজমকে ফেরান শফিউল ইসলাম, তখনও পাকিস্তান রানের খাতাই খোলেনি। ডানহাতি পেসারের বল পাকিস্তানি ওপেনারের ব্যাট ছুঁয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়ে। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন আজম, কিন্তু বাঁচাতে পারেননি উইকেট।
চতুর্থ ওভারে মোস্তাফিজের ওভারে প্রথম দুই বলে চার মারেন আহসান আলী। বাজে লাইনের খেসারত দিতে হয় মোস্তাফিজকে। একই ওভারে দারুণ এক বলে ফেরান মোহাম্মদ হাফিজকে। মোস্তাফিজের লেন্থ বলে মারতে গিয়ে আমিনুলের তালুবন্দী হয়ে ফিরেছেন ১৭ রান করে।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট পড়ে যাওয়াতে রানের গতি শ্লথ হয়ে যায় স্বাগতিকদের। সেখান থেকেই দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন শোয়েব মালিক। আহসান আলীর সঙ্গে জুটি গড়েন। আহসান আলীকে তালুবন্দী করে ৪৬ রানের জুটি ভেঙেছেন স্পিনার আমিনুল। তিনি ৩৬ রান করে ফিরেছেন।
তবে অপরপ্রান্ত আগলে দলকে ঠিকই এগিয়ে নিতে থাকেন শোয়েব মালিক। ৩৬ রানের জুটি গড়েন ইফতিখার আহমেদের সঙ্গে। ১৬ রান করে ফেলা ইফতিখারকে গ্লাভসবন্দী করেন শফিউল। ততক্ষণে অবশ্য জয়ের পথেই ছিল স্বাগতিকরা। এর মাঝে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি।
অবশ্য এই ফিফটি করতে গিয়ে ক্যাচের সুযোগ দিয়েছিলেন শোয়েব। লং অফে সেই ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি নাজমুল শান্ত। বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। এই ক্যাচ নিতে পারলে হয়তো রোমাঞ্চকর কিছুই ঘটতো শেষ দিকে। কারণ ১৮তম ওভারে ইমাদকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন আল আমিন। শেষ ওভারেও ছিল পাকিস্তানকে বিপদে ফেলার সুযোগ। তৃতীয় বলে উড়িয়ে মেরেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মিঠুন। দুই রান তুলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। শোয়েব অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে, রিজওয়ান অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে। ম্যাচসেরা শোয়েবের ৪৫ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন শফিউল ইসলাম। মোস্তাফিজ ছিলেন সবচেয়ে ব্যয়বহুল, ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন আল আমিন হোসেন ও আমিনুল ইসলাশ।
এর আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মন্থর উইকেটে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটে শুরুটা ভালোই হয়েছিল। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোরের আভাস দেয় সফরকারীরা। কিন্তু পঞ্চাশ ছাড়ানো উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে ছন্দপতন। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান না থাকার ছাপ পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রান করে তারা।
ইনিংসের পঞ্চম বলে দলের রানের খাতা খোলেন তামিম। প্রথম ওভারে আসে মাত্র ২টি রান। শাহীন আফ্রিদির দ্বিতীয় ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে গতি বাড়ান নাঈম। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে একটি বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি রানের মালিক হন তামিম। ১৪ রান করে সাকিব আল হাসানকে (১৫৬৭ রান) টপকে গেলেন বাঁহাতি ওপেনার।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৩৫ রান করে বাংলাদেশ। ১১তম ওভারের শেষ বলে ভাঙে ৭১ রানের জুটি। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্তে ফিরতে থাকা তামিমের স্টাম্প ভাঙেন উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৩৪ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে বাঁহাতি ওপেনার করেন ৩৯ রান।
১৫তম ওভারে পরপর দুটি উইকেট হারিয়ে লাইনচ্যুত হয় বাংলাদেশ। শাদাব খান তার শেষ ওভারের তৃতীয় বলে রান আউট করেন লিটন দাসকে, পরের বলে ফেরান নাঈমকে। ফ্লিক করেছিলেন নাঈম, লংঅফে ছুটছিল বল। নিজেই দৌড়ে গিয়ে বল হাতে নেন শাদাব এবং সরাসরি থ্রোয়ে নন স্ট্রাইকের স্টাম্প ভাঙেন। ১৩ বলে ২ চারে ১২ রানে রান আউট হন লিটন।
পরের বলে লংঅনে ইফতিখার আহমেদের ক্যাচ হন নাঈম। তাতে ৪১ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৩ রানে থামেন বাংলাদেশি ওপেনার।
বিগ ব্যাশ লিগে হ্যাটট্রিক করে নজর কাড়া হারিস রউফ তার অভিষেক ম্যাচে প্রথম উইকেট পান তৃতীয় ওভারে। আফিফ হোসেনের (৯) মিডল স্টাম্প ভাঙেন এ পেসার। পরের ওভারে সৌম্য সরকারকে (৭) বোল্ড করেন শাহীন আফ্রিদি। মাহমুদউল্লাহ ও মোহাম্মদ মিঠুনের ১৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন সফরকারী অধিনায়ক। ৫ রানে খেলছিলেন মিঠুন।
পাকিস্তানের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন শাদাব, রউফ ও শাহীন।
খোলাডাক / এনটি