বিরাম চিহ্নের ব্যবহার
বিশেষ প্রতিবেদন :
বিরামচিহ্ন কি?
বিরাম চিহ্নের অর্থ হলো বিশ্রাম। কোন কিছু লিখা বা পড়ার সময় বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য বাক্যের মাঝে বা শেষে কম বেশি থামতে হয়। কথা বলার সময় থেমে যাওয়া শ্বাসযন্ত্রের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বাক্যের মাঝে যেখানে সেখানে থামলে বাক্যের শ্রুতিমধুরতা ও অর্থ হয় বা হয়ে যেতে পারে। তাই বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য বাক্যের কোথায় কতটুকু থামতে হবে তার একটি নিয়ম আছে এবং কতগুলো সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা এ নিয়মগুলো প্রকাশ করা হয় যা বিরামচিহ্ন/ যদিচিহ্ন/ ছেদচিহ্ন নামে পরিচিত।
বিরামচিহ্নের কাজ
১) বাক্যের অর্থ বোঝাতে সাহায্য করে।
২) ভাব, বাক্য বা বক্তব্য উচ্চারণ করে পড়তে সাহায্য করে।
৩) বাক্যের শুরু ও শেষ বোঝাতে সাহায্য করে।
বিরামচিহ্নের ব্যবহার করা হয় ২ ভাবে।
যথা:- ১) পড়ার ক্ষেত্রে ও
২) লিখার ক্ষেত্রে
পড়ার ক্ষেত্রে বিরামচিহ্নের ব্যবহার
ক্রমিক নং
বিরামচিহ্নের নাম
প্রকৃতি
সময় বা বিরতি কাল
১
কমা
,
১ সেকেন্ড বলতে যে সময় সে সময় পর্যন্ত লাগে
২
সেমিকমা
;
১ বলার দ্বিগুন সময় থামতে হয়
৩
দাঁড়ি
।
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৪
প্রশ্নবোধক
?
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৫
বিস্ময়
!
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৬
কোলন
ঃ
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৭
কোলন ড্যাস
ঃ-
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৮
ড্যাস
-
১ সেকেন্ড পরিমান সময় থামতে হয়
৯
হাইফেন
-
থামার প্রয়োজন নাই
১০
লোপ চিহ্ন
`
থামার প্রয়োজন নাই
১১
উদ্ধৃতি চিহ্ন
` ‘ “ ”
১ উচ্চারণ করতে যেটুকু সময় লাগে
১২
বন্ধনী চিহ্ন
() {} []
থামার প্রয়োজন নাই
১৩
তারকা চিহ্ন
*
থামার প্রয়োজন নাই
লেখার ক্ষেত্রে বিরামচিহ্নের ব্যবহার
১. কমা ( , )
ক) বাক্যের যেখানে অতি অল্প সময় বিরতির প্রয়োজন হয়।
খ) একটি বাক্যে একই জাতীয় পদ পরপর বসাতে হলে কমা ব্যবহার করা হয়। যেমন- শাপলা, গোলাপ, জুঁই বাংলাদেশী ফুল।
গ) সম্বোধন পদ বাক্যের প্রথমে থাকলে কমা ব্যবহৃত করতে হয়। যেমন: ভাইসব, চলো খেতে যাই।
২. সেমিকমা ( ; )
সাধারণত: কোন যৌগিক বাক্যে দুই বা ততোধিক সরল বাক্যের মাঝে সেমিকমা ব্যবহৃত হয়। সজল যত ভালো খেলতে পারে; পারভেজ তত নয়।
৩. দাড়িঁ ( । )
বাক্য শেষ করতে দাঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। যেমন: ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী।
৪. প্রশ্নবোধক চিহ্ন ( ? )
বাক্যে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন: তুমি কোন স্কুলে পড়?
৫. বিস্ময় চিহ্ন ( ! )
বাক্যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি প্রকাশ করা হলে বাক্যে বিস্ময় চিহ্ন বসে। যেমন: আহা! কী সুন্দর দৃশ্য।
৬. কোলন ( ঃ )
একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন: ভাষা দুই প্রকারঃ সাধুভাষা ও চলিতভাষা।
৭. কোলন ড্যাস ( :- )
বাক্যে উদাহরণ দিতে হলে কোলন ড্যাস ব্যবহার করতে হয়। যেমন: বচন দুই প্রকার। যথা:- একবচন ও দুইবচন।
৮. ড্যাস (-)
ক) কোন কাক্যে হঠাৎ ভাবধারার পরিবর্তন হলে ড্যাস ব্যবহার করতে হয়। যেমন: একি সুমন – সেদিন তুমি হঠৎ কোথায় গেলে?
খ) বক্যে কোন বিষয়ে উদাহরণ দিতে ড্যাস ব্যবহার করতে হয়। যেমন: আমাদের দেশে অসেন নদী আছে – যেমন: পায়রা, ডাকাতিয়া. সুরমা ইত্যাদি।
গ) একই কথা বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর জন্য ড্যাস ব্যবহার করা হয়। যেমন: আলু আর আলু চাইলেই পাওয়া যায়।
৯. হাইফেন ( - )
এটি হলো যোগাযোগ বা সংযোগ চিহ্ন। সাধারণত সমাজবদ্ধ পদে অংশগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। অন্যভাবে, দুই বা ততোধিক পদ সমান বা অন্যভাবে এক পদে পরিনিত হলে তখন পদ সমূহের মাঝে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাট-বাজার, পথে-ঘাটে, নদী-নালা ইত্যাদি।
১০. লোপচিহ্ন ( ‘ )
বাক্যের মাঝে কোন বর্ণ লুপ্ত করতে লোপচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: যাইব-যা‘ব, করিয়া-ক‘রে ইত্যাদি।
১১. উদ্ধৃতি বা উদ্ধরণ চিহ্ন ( ‘ ‘ / “ “ )
বক্তার কথা তার মত হুবহু বলতে চাইলে উদ্ধৃতি বা উদ্ধরণ চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। যেমন: রনি বললো, ”আমি আজ কলেজে যাব না“।
১২. বন্ধনী চিহ্ন ( () {} [] )
এই চিহ্নগুলো গণিত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে ব্যবকরণের বাক্যেও অন্তর্গত কোন অংশ নিষ্প্রয়োজন মনে হলে বা ব্যাখ্যামূলক বোঝাতে হলে এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: আগামী বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারী) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
১৩. তারকা চিহ্ন ( * )
বিশেষ কোন কিছু নির্দেশ করতে তারকা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: মেসি* একজন বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড়।
বিরামচিহ্ন বাংলা ব্যকরণে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আমারা এর ব্যবহার সঠিক ভাবে করতে পারবো এবং ভাষা শ্রুতিমধুর করতে সক্ষম হবো।
সংকলিত