মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় » লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
লক্ষ্মীপুরে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। প্রচন্ড শীতে শিশুরা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গত তিন দিনে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ পাঁচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগ, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রায় দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। একই অবস্থা জেলার কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও। বর্তমানে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি আছেন ১ শত ২০ জন। প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটে থাকা সবক’টি হাসপাতালেই অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অনেক রোগীকে বেড দিতে না পেরে বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। প্রচন্ড শীতে বেড সংকটে চিকিৎসা নেয়া শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে।
শুক্রবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসছে। জরুরি বিভাগে দৈনিক চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ জন শিশু। গত তিন দিনে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে প্রায় ৫০জন। এদিকে রোগীর বাড়তি চাপের কারণে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বেডে দুই থেকে তিনজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এরপরও অনেক শিশুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে মেঝেতে রেখে। এতে রোগীর পাশাপাশি স্বজনদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর টুমচর গ্রামের মোঃ রাশেদের চার বছরের শিশু সিফাত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। একই সময়ে মান্দারী ইউনিয়নের গন্তর্ব্যপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের নয় মাসের শিশু সন্তান মারুফ ও ভবানিগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের হারুনের তিন মাসের শিশু সন্তান সামিয়াও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পৌর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের রুমি বেগম জানান, প্রচন্ড শীতে গত দুই দিন ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জ্বরও বেড়েছে, চরম দুঃচিন্তায় রয়েছি। হাসপাতালে এসে দেখি অনেক শিশুকে তাদের অভিভাবক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেছেন। আবার অনেকে ভর্তি হয়েছেন বেসরকারী হাসপাতালে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল হাসান জানান, ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দৈনিক ২৫-৩০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সেবা নিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, হঠাৎ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত থাকায় রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে পরিস্থিতি সামলানো সহজ হবে। প্রতিনিয়ত রোগীদের মনিটরিং করা হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ থাকলেও জনবল সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল গফফার জানান, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার হাসপাতালগুলোতে নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ৪৭ জন সহকারী সার্জন নিয়োগ দেয়ায় সেবা দিতে তেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ঔষধ মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।