প্রেম থেকে যুদ্ধ,সাক্ষী গোলাপ
অনলাইন ডেস্ক
গোলাপের মত সুন্দর হোক ভালবাসা—এই সঙ্কল্পটা আজ অনেকেই করছেন বা করবেন। ভালবাসার মানুষকে একটু সৌন্দর্য তো উপহার দেওয়াই যায়, অন্তত সম্পর্কের সূচনায় সেই সৌন্দর্যবাহক গোলাপ হতেই পারে। তাই বোধহয় গোলাপকেই প্রেম নিবেদনের অস্ত্র করা হয় ।
জীবাশ্ম বলছে গোলাপের মর্ত্যে আগমন প্রায় সাড়ে তিন কোটি বছর আগে । জার্মানির হিল্ডেসিম ক্যাথিড্রালে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো গোলাপ-লতা । বাগান আলো করা গোলাপের প্রথম হদিশ পাওয়া যায় প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে । সেদিন অনেক কষ্টে চিনের বাগানে ফোটানো হয়েছিল সুন্দর এই ফুল।
এরপর রোম, মধ্যপ্রাচ্য। দক্ষিণ রোমে একটি গোলাপ বাগান তৈরি করেছিলেন রোমের সম্রাট । পরবর্তী সময়ে গোলাপবাগ তৈরি করেছিলেন নেপোলিয়নের স্ত্রী জোসেফাইনও। জোসেফাইনের সেই বাগানে বসেই জোসেফ রেডউট আঁকেন পৃথিবী বিখ্যাত জলরঙ দিয়ে গোলাপের ছবি “Les Roses’’।
শুধু ভালবাসারই প্রতীক নয়, গোলাপ যুদ্ধেরও অর্থবহন করেছে । পঞ্চদশ শতকে ইংল্যান্ডের দখল কার থাকবে তা নিয়ে বিবাদ ছিল ইয়র্ক এবং ল্যাঙ্কাস্টারের মধ্যে । ইয়র্কের বাসিন্দাদের প্রতীক ছিল সাদা গোলাপ, আর ল্যাঙ্কাস্টারের লাল গোলাপ । সেজন্য এই বিবাদকে বলা হয় “War of the Roses”।
ভারতীয় উপমহাদেশের গোলাপপ্রীতি ৫ হাজারেরও বেশি সময় পুরনো । পুরাণ বলছে, পৌরাণিক আমলেও গোপাল ছিল—একবার কোন ফুল শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদ বেধেছিল ব্রহ্মার সঙ্গে বিষ্ণুর । ব্রহ্মার বক্তব্য পদ্ম, আর বিষ্ণু বলছেন গোলাপ। বিষ্ণুর বাগানেও নাকি গোলাপ ছিল । এখান থেকেই অনুমান করা হয়, হিমালয়েও এক সময় ফুটত গোলাপ । আর সেটা যদি ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে ফুটে থাকে, তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
খ্রিস্টপূর্ব ১০০ বছর আগে প্রাচীন আয়ুর্বেদেও গোলাপের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে গোলাপ ব্যবহার হচ্ছে ঔযধি হিসেবে । ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজ্যান্ডার যখন এসেছিলেন, তখন তিনি এদেশের বেশ কিছু গাছ পাঠিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু অ্যারিস্টটলকে ।
এবার বলা যাক গোলাপ আর মোগলদের কথা । অনেকেই বলেন, বাবর নাকি প্রথম এ দেশে গোলাপ আনেন । এ তথ্যের সত্য-মিথ্যা নিয়ে আজ না হয় থাক । গোলাপ তার এতটাই প্রিয় ছিল যে গোলাপকে জুড়ে দেন নিজের মেয়েদের নামের সঙ্গে—গুলচিহারা, গুলরুখ, গুলবদন, গুলরঙ (পার্সিতে গুল শব্দের অর্থ গোলাপ) । আসলে শুধু তো বাবর নন, তার উত্তরপুরুষরাও এই গোলাপের কদর করেছেন। আকবর নাকি উটের পিঠে চাপিয়ে বন্ধুদের স্ত্রীদের জন্য এই গোলাপ পাঠাতেন । মোগল বাগানে আজও গোলাপ দেখতে পাওয়া যায়।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বেগম সম্রাজ্ঞী নূরজাহান গোলাপ ফুলের পাপড়ি ফেলে স্নান সারতেন, গোলাপের আতর ছড়াতেন সারা শরীরে। শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন একজন সুফি সাধকও । তাঁকে দগ্ধে দগ্ধে মারে ব্রিটিশরা । এই তো কিছু বছর আগেই তার কবরের সন্ধান মিলেছে। সেই কবরে আজও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান অগণিত মানুষ।
গোলাপ সম্পর্কে এ তথ্যগুলি শুনলে অবাক হয়ে যাবেন আপনি। জানেন কি— (১) ক্যালিফোর্নিয়ায় ফুটেছিল সব চেয়ে বড় গোলাপ। সেই গোলাপের ব্যাস ৩৩ ইঞ্চি।(২) অ্যারিজোনাতে গোলাপের সব চেয়ে বড় বন—৯ হাজার স্কোয়ার ফিট। (৩) পৃথিবীর সব চেয়ে দামী গোলাপ ফোটাতে সময় লেগেছে ১৫ বছর। খরচ ৫ মিলিয়ন ডলার। (৪) গোলাপ গাছ অনেক লম্বা হতে পারে । সব চেয়ে উঁচু গোলাপ গাছ ২৩ ফিট পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। (৫) পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত গোলাপ বাগান আছে ইতালিতে । সেখানে রয়েছে ৭.৫ হাজার গোলাপ ।