
রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ ও দুর্নীতি » বিএনপির নেতা-কর্মী নির্যাতনে ভয়ংকর ছিলেন আ’লীগ নেতা ইসমাইল মেম্বার
বিএনপির নেতা-কর্মী নির্যাতনে ভয়ংকর ছিলেন আ’লীগ নেতা ইসমাইল মেম্বার
আমজাদ হোসেন আমু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি;
মো. ইসমাইল হোসেন জীবনের শুরুতে প্যাডেল সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। টেনেটুনে জীবন চললেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। হঠাৎ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভাগ্যের গতি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হন। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের দলের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিনা প্রতিদ্ধিতায় মেম্বার নির্বাচিত হন। শুধু তিনি নন, তার স্ত্রীকেও মেম্বার বানান। মেম্বার হয়ে ভাগিয়ে নেন স্থানীয় যুবলীগের আহবায়কের পদ।মো. ইসমাইল মেম্বার এলাকায় “কালা মানিক” নামে বেশ পরিচিত।
যুবলীগের আহবায়ক, মেম্বার পদের আধিপত্য বিস্তারে এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাবে গড়ে তোলেন ইসমাইল বাহীনি।তার নিজস্ব মাদক খাওয়া এবং বেচা-বিক্রির লোক রয়েছে। যাদের ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, হামলা-মামলার কাজ করেন। তৎকালিন সময়ে তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের সাথে তার বাহীনির গোলাগুলি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে চর লরেন্স বাজারে বিএনপি জামায়াতের ডাকা অবরোধ সমর্থনে মিছিল হলে হেলমেট মাথায় প্রকাশ্যে তাক করে গুলি বর্ষণ করেন ইসমাইল। বিএনপির আন্দোলন দমনে ভয়ংকর ছিলেন ইসমাইল। তার বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় মামলা রয়েছে।
বিএনপি নেতা গোলাম কাদের বলেন, ইসমাইল আওয়ামী লীগের প্রভাবে তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে বিএনপির মিছিল, মিটিং, অফিস, বাসা-বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। তার নির্যাতন ও অত্যাচারের শেষ নেই। আমার উপর হামলা করেছে। আমার বাসায় ভাংচুর, লুট করেছে। তার নির্যাতন ও হামলা জীবন বেঁচে বেঁচে ফিরে এসেছি। তার প্রভাব, ক্ষমতা ছিল ব্যাপক। সাধারণ মানুষকে হয়রানি তার নেশা ছিল, মানুষ তার ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। তার নিজস্ব ইসমাইল বাহীনি রয়েছে। ইসমাইল বাহীনির সাথে একসময় প্রকাশ্যে পুলিশের গোলাগুলি হয়। তার নির্যাতন ও অত্যাচরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আতংকে থাকতো। তার নিজস্ব বাহীনি দিয়ে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মীদের টর্চার করতো। সে খুবই ভয়ংকর মানুষ।
আব্দুল বাতেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দস্যু বাহীনির প্রধান ইসমাইল মেম্বার। তার বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট লুট হইত। তার আক্রমন ও নির্যাতনের শিকার আমি। আমার মাথায় কয়েকটা আঘাত করে ইসমাইল। তার বাহিনীর নির্যাতন বর্বর ছিল।
আব্দুল জলিল বলেন, ইসমাইল মেম্বারের নেতৃত্বে তার উপর হামলা হয়েছিল। তার নির্যাতন ও অত্যাচার ছিল ভয়ংকর। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপর তার নির্যাতন ও হয়রানি ছিল সন্ত্রাসী স্টাইল।
মো. আলাউদ্দিন বলেন, ইসমাইল ও তিনি মেম্বার পদে ভোট করেন। ইসমাইল তার সাথে প্রার্থী হওয়ায় তার উপর ও বাড়িতে হামলা করে। তার নির্যাতন ও হামলায় কয়েকবার আহত হয়েছি। তার বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুট করে ইসমাইল। তার আলাদা বাহীনি রয়েছে।
নিহত আব্দুস শহীদের ছেলে মো.রিয়াজ বলেন, ইসমাইল মেম্বার তার বাবা মো.শহীদের উপর বর্বর হামলা করে রক্তাক্ত করেন। তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করালে মারা যান তিনি। ইসমাইলসহ তার বাহীনির নির্যাতনে তার বাবা নিহত হন, তার পরিবার ইসমাইলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উপজেলার পূর্ব চর মার্টিন গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মাইন উদ্দিনের ছেলে, ‘বিসমিল্লাহ ডেকো টাইলসে’র মালিক ব্যবসায়ী তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, ইসমাইল মেম্বার তার বাহীনি দিয়ে তার গাড়িতে হামলা, চাঁদা দাবি এবং তার দুটি কোরবানী গরু জোর পূর্বক ছিনতাই করে।
বাজার ব্যবসায়ী বটু চৌধুরী বলেন, তোরাবগঞ্জ বাজারে দোকান ঘর নির্মাণ করতে গেলে ১লাখ চাঁদা নেন ইসমাইল মেম্বার। টাকা না দিলে ঘর করতে বাঁধা ও হামলা-মামলার ভয় দেখান। তোরাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী শামছুদ্দিন মানিক বলেন, তার দোকান ঘরের সামনের জায়গা দখলের চেষ্টা করে ইসমাইল,পরে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দিতে তাকে। তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজারের ব্যবসায়ী মহসিন হুজুরের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে।
মো.ইসমাইল মেম্বার উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি চর লরেন্স ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নুরুজ্জামান বাচ্চুর ছেলে। তিনি চর লরেন্স ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের ৩বার মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার ১.২.৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের দায়িত্বে রয়েছেন। মেম্বার পদ থেকে পদত্যাগ করে দু’বার চেয়ারম্যান প্রার্থী হন।
অভিযুক্ত মো. ইসমাইল মেম্বারের মেঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তথ্য পাওয়া যায়নি। কমলনগর থানা ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা নেই। রামগতি-কমলনগর(সার্কেল) মো.রকিবুল হাসান বলেন, ইসমাইল মেম্বারের নাম শুনেছি। তার ব্যাপারে একাধিক অনিয়মের তথ্য রয়েছে। তবে এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ মামলা করতে চাইলে সুযোগ রয়েছে।